চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে ১৬ লাখ ৩২ হাজার শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে


চট্টগ্রাম : টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে আগামী ১২ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কর্মদিবস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে এবং ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৮ কর্মদিবস স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে অনুষ্ঠিত হবে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)-২০২৫’। এ সময়ে জেলার ১৫ উপজেলার ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী/প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে এক ডোজ টিসিভি টিকা প্রদান করা হবে। এই টিকা পেতে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য (১৭ ডিজিট) দিয়ে ওয়েব সাইটে নিবন্ধন করতে হবে। তবে এ বয়সী কেউ কোন কারণে রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে তাকেও টিসিভি টিকা দেয়া হবে। আগামী ১২ অক্টোবর  রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় পটিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)’-এর  শুভ উদ্বোধন করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে এবার স্কুল ও মাদ্রাসাসহ মোট ৬ হাজার ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সর্বমোট ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৪১ জন শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৭১ জন ও কমিউনিটিতে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭০ জন। এছাড়া ক্যাম্পেইনে ভ্রাম্যমান হিসেবে মপ-আপ টিম নিয়োজিত থাকবে। টাইফয়েড টিকা প্রদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সর্বত্র প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যে কোন ধরণের গুজব রোধে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এ টিকা নিতে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত  মোট ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮১ জন শিশু অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে, যাহার হার ৬১ শতাংশ এবং রাউজানে ৭৬ শতাংশ। শুক্রবার ও সরকারী ছািট ব্যতীত নির্ধারিত তারিখে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময়ে ১ ডোজ করে টাইফয়েড ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। 

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করার লক্ষ্যে আজ ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে প্রেস কনফারেন্স সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুল আনোয়ার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ.এম জাহিদুল ইসলাম ও কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহাদাত হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 প্রেস কনফারেন্সে সিভিল সার্জন জানান, জেলার ১৫ উপজেলার ২’শ ইউনিয়নের ৬’শ ওয়ার্ডে  ১ হাজার ২১৫ জন প্রশিক্ষিত ১ হাজার ৮’শ ভলান্টিয়ার, ৬’শ প্রথম সারির পরিদর্শক ও ৬০ জন দ্বিতীয় সারির পরিদর্শক টিকাদান ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত থাকবে  চট্টগ্রাম জেলায় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্হিভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে এ টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণাসহ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবার ও প্রতিবেশীদের জানাতে হবে। মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের নেতা, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। টাইফয়েড টিকা অত্যন্ত নিরাপদ। এ টিকা গ্রহণের পর অন্যান্য টিকার ন্যায় সামান্য প্রতিক্রিয়া অর্থ্যাৎ টিকাদানের স্থানে লালচে হওয়া, সামান্য ব্যথা, মৃদু জ্বর, ক্লান্তিভাব ইত্যাদি হতে পারে, যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তাই কোন ধরণের গুজবে কান না দিয়ে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে নির্দিষ্ট দিনে টাইফয়েড টিকা নিতে টিকাদান কেন্দ্র সমূহে আসতে উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানান তিনি। 

কনফারেন্সে জানানো হয়, টাইফয়েড জ্বর একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে। আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কম হলেও বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের ইপিআই কর্মসূচীর আওতায় দেশব্যাপী আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)-২০২৫’।   

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন