এ.বি.এম.হাবিব, নওগাঁ :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরবঙ্গের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন বাংলাদেশে তৈরীর অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। ভার্সন কাকে নিয়ে বানাবেন? আওয়ামী লীগের ওই মন্ত্রী,এমপি, জেলা, উপজেলার যারা সভাপতি সেক্রেটারি ছিল, যারা চেয়ারম্যান ছিল তাদেরকে নিয়ে? আপনি তো আর ইউনিয়নের মেম্বারকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানায়ে দিবেন না। এরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, এরা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে জড়িত, এরা কি করছে তা আপনারা প্রত্যেকেই ভালো করে জানেন। সুতরাং তাদের মধ্যে মন্দের ভালো খোজা, যারা একেক জন হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বানালো, সেই সুযোগ তাদেরকে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভালো মানুষরা একত্রিত হয়ে যদি আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় করুক, এতে আমাদের কোন সমস্যা থাকবে না, বললেন সার্জিস আলম।
মঙ্গলবার (৭অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির জেলা ও উপজেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন,যেহেতু প্রতিক নিয়ে আইনগত কোন বাধা নেই, সুতরাং এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে শাপলা প্রতিক নিয়েই অংশগ্রহণ করবে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীকের ব্যাপারে পজেটিভ সাড়া পাচ্ছি। আশা করি নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আস্থা ধরে রাখার কাজ করবে। এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাবে নাকি, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একই পথে হাঁটবে, তখন দাবি, চিন্তাভাবনা, দেশ এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করার বিষয়গুলো মিলে যায় তখন হতেই পারে জনগণের হয়ে, একসাথে কোন দলের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার। এনসিপি এ বিষয়গুলোকে পজিটিভ ভাবেই দেখছে। কিন্তু এনসিপি থেকে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, কিছু উপদেষ্টার আচরণ দেখতে পাচ্ছি আমরা, যে তারা কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো, দেশে থাকুক আর দেশের বাহিরেই থাকুক। এই দায় সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না। তারা এত শহীদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ওখানে আছে। এখন তারা যদি জীবনের একটু থ্রেটের ভয় করে, তাহলে তাদের তো ওই দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল না। সুতরাং স্পষ্ট কথা তারা যদি এত ত্যাগ ভুলে গিয়ে শুধু ওইটুকু চেষ্টা করে, সবাই না, কিছু উপদেষ্টা। তারা যদি এমনটা করে থাকে তাহলে দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। কোথায় সেফ এক্সিট? সেফ এক্সিট তো একমাত্র মৃত্যু, মৃত্যু ছাড়া তো মানুষের সেফ এক্সিট নেই। দেশ থেকে পালায় যাবেন ওখানেও আপনাকে মানুষ আটকাবে। সম্প্রীতি একটি গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, সাক্ষাৎকারে উনি বলেছেন, উনি ওনার যে ভাইকে দেশে রেখে এসেছিলেন সে ভাইকে দেশে গিয়ে দেখতে পারবেন না, উনার যেই ঘরে সারা জীবনের স্মৃতি, সেই ঘরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। উনি যে সুস্থ মাকে দেখে গিয়েছিলেন, ওই সুস্থ মাকে অসুস্থ করে ফেলা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এই প্রত্যেকটা বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। আগামীর বাংলাদেশে আমরা আর এ ধরনের ঘটনা প্রত্যাশা করি না। আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে, এই যে ব্যাথা বেদনাটা আমরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছি, তার এরকম হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাদের ব্যাথা বেদনা গুলো যেন স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ হয় এবং যারা করেছে তাদের বিচার হয়। এগুলো কে করেছে? আওয়ামী লীগ করেছে। সুতরাং স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের অর্থের বিনিময়ে অথবা কোন সুযোগ-সুবিধার বিনিময় যেন আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া না হয়। বিএনপির সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যন্ত তারা যেন এ বিষয়টিতে কঠোর থাকে। আবার যদি আওয়ামী লীগ কোনদিন ফিরে আসে তারা কেউ মাফ পাবেনা। সুতরাং আমরা এই আহ্বান টুকু জানাই। তার ব্যাথার সঙ্গে আমরাও সমব্যথিত। আমরা চাই ওই খনিরা আর যেন কোনভাবেই দেশে আশ্রিত না হয়।
সমন্বয় সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ এনসিপির জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নওগাঁর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।