চলতি বছর ২০২৩ সাল থেকে সারা বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন কারিকুলামের আওতাভুক্ত পাঠদান পদ্ধতি চালু হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী প্রণীত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিষয়ের উপর পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সারা বাংলাদেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। সেই সাথে সম্প্রতি সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণকেও নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পুরাতন শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নতুন নিয়মে নতুন কারিকুলামের শিক্ষাদান পদ্ধতি সত্যিই প্রশংসনীয়।
বর্তমানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বইটি দুটি ভাগে বিভক্ত রয়েছে।
একটি হচ্ছে অনুশীলন বই এবং অপরটি হচ্ছে অনুসন্ধানী পাঠ।
অনুশীলন বইটি মেইন বই হিসেবে রয়েছে।
অনুসন্ধানী পাঠ বইটির সাহায্যকারী বই হিসেবে আছে।
নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বিষয়ে মুখস্থ নির্ভরতা বাদ গিয়েছে। নতুন বই এ অধ্যায়ের পরিবর্তে রয়েছে" শিখন অভিজ্ঞতার শিরোনাম"। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ১৭ টি শিখন অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সপ্তম শ্রেণীতে শিখন অভিজ্ঞতা রয়েছে ১২টি।
নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বইটিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ও চিন্তন দক্ষতার সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞান বইয়ের প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতায় অনুশীলন বইয়ের মধ্যে খালি জায়গা রয়েছে।
সেখানে শিক্ষার্থীদের মনে যে সকল প্রশ্ন জাগে তা লিখতে পারবে। তাছাড়া ছবি আঁকার জন্য খালি জায়গা রয়েছে।
নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বইয়ের লেখালেখি ও আঁকাআঁকির জন্য ছক এবং খালি জায়গা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতার উপর চাপ কমবে। অর্থাৎ খাতার প্রয়োজন খুব একটা নেই বললেই চলে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , ষষ্ঠ শ্রেণীরশিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ও চিন্তন দক্ষতার সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞান বইয়ের প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতায় অনুশীলন বইয়ের মধ্যে খালি জায়গা রয়েছে।
সেখানে শিক্ষার্থীদের মনে যে সকল প্রশ্ন জাগে তা লিখতে পারবে। তাছাড়া ছবি আঁকার জন্য খালি জায়গা রয়েছে।
নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞান বইয়ের লেখালেখি ও আঁকাআঁকির জন্য ছক এবং খালি জায়গা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতার উপর চাপ কমবে। অর্থাৎ খাতার প্রয়োজন খুব একটা নেই বললেই চলে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম শিখন অভিজ্ঞতার নাম হলো ,"আকাশ কত বড়" এই শিখন অভিজ্ঞতার প্রথমে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে , "আকাশের দিকে তাকিয়ে যা যা প্রশ্ন তোমাদের মনে জাগে তা এখানে লিখে রাখো"। পাশে খালি জায়গা দেওয়া আছে। আবার শিক্ষার্থীর পাশের বন্ধুর পছন্দের আকাশের ছবি আঁকার জন্য খালি জায়গা ও দেওয়া আছে। নতুন কারিকুলামের এই নতুন নিয়মের জন্য পাঠদান পদ্ধতি অনেক সহজ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা আনন্দময় পরিবেশের সাথে পাঠদান সম্পন্ন করছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বইটিতে প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতার শিরোনাম এমনভাবে সাজানো রয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে ঘটে। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের "গতির খেলা" অভিজ্ঞতার শিরোনামে শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতাটি শেষ করার কথা বলা হয়েছে। "পিকনিক! পিকনিক!" নামে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি অভিজ্ঞতার শিরোনাম রয়েছে ,যেখানে পিকনিক করে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে রাসায়নিক পরিবর্তন ও ভৌত পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অভিজ্ঞতার শিরোনাম "ফসলের ডাক"। এখানে মাঠ পর্যায়ে যেয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ফসলের পরিচর্যা এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া আরো বলা হয়েছে শিক্ষার্থীরা যদি ফসলের মাঠে যেতে না পারে তাহলে নার্সারিতে যাবে, তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় টবে গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা ও বৃদ্ধি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
সপ্তম শ্রেণির আরেকটি অভিজ্ঞতার শিরোনাম হল "সূর্যালোকে রান্না"। এই অভিজ্ঞতার শিরোনামে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে সূর্যের আলো ব্যবহার করে কিভাবে শিক্ষার্থীরা সৌরচুল্লী তৈরি করবে এই প্রক্রিয়াটি দেখানো হয়েছে । নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের হাতে - কলমে কাজের উপর অনেক জোর দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে যেভাবে শিক্ষার্থীর শিখন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিখন স্থায়িত্ব হবে এভাবেই বইগুলো প্রণীত হয়েছে। বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের সাথে অনুসন্ধানীর বইটি সহায়ক হিসেবে চমৎকার হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা গাইড ভাইয়ের উপর নির্ভর করবে না। শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ের উপর নির্ভরতা কমানোর উদ্দেশ্যেই নতুন কারিকুলামে লিখিত বইগুলোর শিখন অভিজ্ঞতা সাজানো হয়েছে। নতুন কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পরিবর্তে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে শিখন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে রয়েছে ভিন্নতা। মূল্যায়নে কোন জিপিএ থাকবে না। থাকবে না প্রথম ,দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান নির্ধারণ। মূল্যায়ন হবে উৎসবমুখর পরিবেশে বছরে দুইবার। এই মূল্যায়নের নাম হবে" সমষ্টিক মূল্যায়ন"। এ ছাড়া বছরব্যাপী "শিখনকালীন মূল্যায়ন" চলতে থাকবে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান চলাকালীন সময়ে। বিজ্ঞান বিষয়টি অ্যাসাইনমেন্ট অথবা প্রজেক্ট উপস্থাপন এর মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। মূল্যায়ন নিয়ে সরকার ব্যাপক গবেষণা করছে। মূল্যায়নের উপর শিক্ষকগণকে আরো প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
নতুন কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের জোরায় কাজ এবং দলগত কাজের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অংশগ্রহন মূলক পদ্ধতির মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। শ্রেণীকক্ষে কিভাবে পাঠদান করলে তা আকর্ষণীয় হবে তার উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছে "শিক্ষক সহায়িকা"। এই "শিক্ষক সহায়িকা" বইয়ের সাহায্য নিয়ে সারা বাংলাদেশে জেলা ,উপজেলা এবং গ্রামাঞ্চলে সকল শিক্ষকগণ একই নিয়মে পাঠদান করবে। এর ফলে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সকল শিক্ষকগণ যেন "শিক্ষক সহায়িকা" এর সাহায্য নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এভাবেই শ্রেণীকক্ষে পাঠদান পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে।
মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে আনন্দমুখর পরিবেশে সহপাঠীদের সাথে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে শিখন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
এভাবে অর্জিত শিখন অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে এবং শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেমিক ,উৎপাদন মুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর আলোকে জাতীয় শিক্ষা ক্রম ২০২২ এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিখন সামগ্রিক প্রণয়ন করা হয় । ২০২৩ সালে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়িত করা হয় মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে। বর্তমানে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আনন্দমুখর পরিবেশে পাঠদানে অংশগ্রহণ করছে।
মোসা: রোকসানা ইয়াসমীন
সিনিয়র শিক্ষক (জীব বিজ্ঞান)
কসবা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ।
কসবা ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নতুন কারিকুলামের মাস্টার ট্রেইনার, বিজ্ঞান বিষয়, উপজেলা পর্যায়।
Tags
বাংলাদেশ