মহাদেবপুর (নওগাঁ) : শ্রেষ্ঠ সার্কেল জয়ব্রত পাল, শ্রেষ্ঠ ওসি মোজাফ্ফর হোসেন ও শ্রেষ্ঠ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ
আব্দুল ওয়াদুদ, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি :
গত মার্চ মাসের পুলিশের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে নওগাঁর ১১ উপজেলার মধ্যে মহাদেবপুর শ্রেষ্ঠ থানা নির্বাচিত হয়েছে। সেই সাথে এখানে কর্মরত তিন কর্মকর্তা শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এরা হলেন, মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ শ্রেষ্ঠ ইন্সপেক্টর (তদন্ত)।
গত ১৩ এপ্রিল নওগাঁ পুলিশ লাইন্স ড্রিল সেডে আয়োজিত পুলিশের মার্চ ২০২৩ মাসের মাসিক কল্যাণ সভায় পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক তাদেরকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেন। এই তিনটি পদ ছাড়াও প্রতিমাসে একজন করে এসআই ও এএসআই সহ মোট পাঁচ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এবার এক মহাদেবপুর থানা থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম তিন জন।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার ওসি জানান, যে কয়টি ক্যাটাগরির কাজের সফলতার ভিত্তিতে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে মহাদেবপুর থানা তার প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। তিনি জানান, গতমাসে এই থানায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড হয়েছে ৪৭টি। এরমধ্যে রয়েছে হত্যা একটি, ছিনতাই একটি, মাদক মামলা ২৫টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৪টি ও অন্যান্য। বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে ৩৫টি। পাঁচ জন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে হেরোইন ৪০ গ্রাম, ফেন্সিডিল ২৮ বোতল, গাঁজা সোয়া পাঁচ কেজি, ইয়াবা ২৮০ পিস, ট্যাপেন্ডাডল ৩৩৪ পিস ও দেশী মদ ১০০ লিটার। এসময় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হয়েছে ১১৬ টি ও নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১০৯ জনকে। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে দুইটি চাকু ও আটটি হাসুয়া, দুইটি চোরাই মোটরসাইকেল, দুইটি ট্রাক্টর, একটি অটো চার্জার, একটি ভ্যান, হারিয়ে যাওয়া মোবাইলফোন ১৫টি, ছিনতাই হওয়া টাকা দুই লক্ষ ৪৫ হাজার, একটি ফ্রিজ, একটি সোনার চেইন, একজোড়া কানের দুল ও দুইটি ছাগল উদ্ধার করা হয়েছে। গতমাসে হারিয়ে যাওয়া ১১ জন মেয়ে এবং নিখোঁজ ১১ জন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া থানার সার্বিক অফিসিয়াল কার্যক্রম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভাল ভূমিকা, তদন্ত ও মামলা নিস্পত্তি বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় মহাদেবপুর থানা এবার শ্রেষ্ঠ থানা নির্বাচিত হয়েছে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত থাকবে বলেও তিনি জানান।
গতমাসে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ মার্চ চারজন মুখোশধারি ছিনতাইকারি এক মোটরসাইকেল আরোহীর পথ রোধ করে তাকে মারপিট করে ১৪ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই তিনি থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম গঠন করে এই ক্লুলেস রহস্য উদঘাটনে নামেন। তারা সড়কের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ, মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ট্যাকিং ও নানান তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মাত্র ১২ দিনের মাথায় চার আসামীকেই গ্রেফতার করে রহস্য উদঘাটন করেন। এধরনের কর্মকান্ডের জন্যই তিনি জেলায় শ্রেষ্ঠ সার্কেলের পুরস্কার লাভ করেন। তিনি, ওসি এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মহাদেবপুরে যোগদানের পর তাদের নেতৃত্বে গতবছর ২ নভেম্বর ক্লুলেস সড়ক ডাকাতির রহস্য উদঘাটন করে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার, ২২ ডিসেম্বর পাকা গোয়ালঘরের সিঁদ কেটে গরু চুরি করে পিকআপ ভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়া আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার, চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধার ও গরু পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ জব্দ, ২৭ ডিসেম্বর চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধার, ওইদিন ও এবছর ৮ জানুয়ারি বিভিন্ন উপজেলা থেকে আন্তঃজেলা বৈদ্যুতিক মিটার চোরচক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার ও মাটির নিচে পুতে রাখা অবস্থা থেকে কয়েকটি চুরি হওয়া মিটার উদ্ধার করে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন। ক্লুলেস ডাকাতির রহস্য উদঘাটনের ঘটনায় মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল রাজশাহী রেঞ্জে শ্রেষ্ট কর্মকর্তা নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জানান, উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও তাদের সার্বিক নির্দেশনা ও সহযোগীতায় এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মহাদেবপুর থানা পুলিশ সদা তৎপর ছিল। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।