বিনোদন ডেস্কঃ মাসুদ পারভেজ (জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে।কিন্তু ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন সোহেল রানা ।
এটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানার একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।এছাড়া ২০১৯ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি শিক্ষা জীবনে একজন ছাত্রনেতা ছিলেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাপিয়ে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকাতে হলেও পৈতৃক বাসস্থান বরিশাল জেলায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন।মাসুদ পারভেজ ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ গ্রহণ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্বাচন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পান।তিনি ওজান্তে (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে তার ভূমিকার জন্য সেরা অভিনেতার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন, সহোশি মানুষ চাই (২০০৩)এর জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন।এই ড্যাশিং হিরো চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন ওরা এগারো জন ফিল্ম দিয়ে। তিনি ১৯৮৩ সালে পারভেজ ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করেন যা প্রথম চলচ্চিত্র মাসুদ রানা (১৯৭৪) প্রযোজনা করে। তার স্মরণীয় সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে :দোস্ত-দুশমন,জিঞ্জির,বারুদ,ওস্তাদ,সাগরেদ,জনি অস্বীকার,আসামি, হাজির,আখেরি,এপার ওপার, নিশান,জারকা,প্রতিহিংসা,প্রেমনগর,চ্যালেঞ্জ,বড় মা, নাম বদনাম,প্রেম বন্ধন,গাদ্দার,নাগ পূর্ণিমা,মাসুদ রানা, মহারাজা,সেলিম জাভেদ,স্ত্রী,প্রহরী,প্রেমের দাবি,অজান্তে, হাঙর নদী গ্রেনেড, সাহসী মানুষ চাই,মায়ের মর্যাদা।
মডেল মাহমুদ রিফাত আমাদের কিংবদন্তি শিল্পী ড্যাশিং হিরো মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার ৭৮ বছর উপলক্ষে বলেন ২১শে ফেব্রুয়ারি তার জন্মদিন এবং তার জীবনের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে হচ্ছে সামাজিক কারণে কিন্তু আজকে তার জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেছে।এটা আমার কাছে খুশির বিষয় না, তাই আমি বেক্তিগত ভাবে খুশি না এটা একান্তই আমার বেক্তিগত মতামত। তার পরেও সামাজিক কারণে জানাতে হচ্ছে জন্মদিন এবং জীবনের নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সোহেল রানা বাংলাদেশে একজনই,তার কোন বিকল্প নেই। তার সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলব তিনি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা, একজন অভিনয় শিল্পী, একজন রাজনৈতিক নেতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে তার অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন অভিনয় শিল্পী তিনি।
আমার দেখা মতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে সবচেয়ে স্মার্ট এবং স্টাইলিশ হিরো সোহেল রানা, তিনি ড্যাশিং হিরো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই তার প্রধান পরিচয় হল তিনি একজন ভালো মানুষ এবং যারা তাকে বাক্তিগত ভাবে চিনে তারাও আমার সাথে একমত হবেন।যারা তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন তারা জানেন যে তার একটি পবিত্র আত্মা আছে। তিনি কখনই কারো সাথে প্রতারণা করেন না, সর্বদা তার প্রতিশ্রুতি রাখেন এবং সবাই তার সুন্দর হাসি পছন্দ করেন।বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আর কখনো সোহেল রানা পাবে না। কিন্তু আমাদের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রির তাকে তার জীবিত সময়ের মধ্যে পেশাদারভাবে আরও সম্মান দেওয়া উচিত।কারন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শব্দটির সাথে যে নামগুলো সম্পৃক্ত তার মধ্যে অন্যতম একটি নাম হল সোহেল রানা।তার রাজনৈতিক জীবন এর সাথে বর্তমান রাজনীতির কোন মিল পাওয়া যায় না আমার মনে হয়, কারন তিনি রাজনীতি করেছেন দেশের জন্য। তবে পেশাগত দিক ছাড়া বেক্তি সোহেল রানা কে যারা চিনেন তারা সবাই জানেন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন সচ্ছ মনের মানুষ,একজন সচ্ছ বেক্তিত্তের মানুষ।আব্বুর পরে আমি তাকেই অনুকরণ করার চেষ্টা করি।কারণ আমার কাছে পেশার থেকে আরও বড় পরিচয় হলো বেক্তি মানুষ এবং মানুষত্ব। অধ্যয়ন জীবন থেকেই বাংলাদেশের জন্য তার বিশাল অবদান রয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি যতটুকু তিনি আমাদের কাছ থেকে প্রাপ্য। এছাড়াও তিনি একজন খাঁটি রাজনৈতিক নেতা যদিও বর্তমানে রাজনীতি ভিন্ন ধারার। আমি জানি না একুশে পদকের জন্য কোন ক্যাটাগরি গুলো অনুসরণ করা হয়।আমার জানামতে এবং একজন আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে স্পষ্টতই বলতে চাই তিনি নিঃসন্দেহে একুশে পদকের প্রাপ্য। সে সবগুলো ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত কারণ সে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন কিংবদন্তি শিল্পী, নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। তার পরেও তিনি কেন এটি পাচ্ছে না আমার বোধগম্য নয়। তবে এটা অবশ্যই বাঙালি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা এবং সরকারের ব্যর্থতা। তিনি জীবিত অবস্থায় আমরা তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারছি না।
সরকারের অবশ্যই উচিত তার জীবিত থাকা অবস্থায় এর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে কারণ তিনি এ দেশের একটি সম্পদ।আমার মনে হয় একুশে পদক যদি সঠিক ভাবে প্রদান না করে এটা প্রকৃত সম্মান হারাবে। কারন একুশে পদক একটি সম্মানজনক সম্মানা। তবে এটা সঠিকভাবে প্রদান না করতে পারা আমাদের ব্যর্থতা। মাশরুর পারভেজ জীবরান ভাইয়া চাচ্চুর একমাত্র ছেলে।ভাইয়া একজন অভিনেতা এবং একজন দুর্দান্ত পরিচালক, আমি তার কাজ পছন্দ করি এবং ভাইয়ার নতুন কাজের জন্য অপেক্ষা করছি।আশাকরি ভাইয়া সামনে আরও অনেক বেশি ভালো কাজ নিয়ে আসবে।সবসময় পাশে আছি এবং ভালোবাসা থাকবে ভাইয়ার জন্য। আর জন্মদিন এবং ৭৮ বছর উপলক্ষে বলতে চাই ব্যক্তি পরিচয় থেকেও তিনি একজন গুণী-অভিনেতা,কিংবদন্তি শিল্পী তার বর্ণাঢ্য জীবন সবার জন্য অনুসরণীয় এবং তিনি বাংলাদেশের একজন প্রকৃত নায়ক।আবার জানাচ্ছি অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা এবং সুস্থতা কামনা করছি ।