Daily News BD Online

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারীর মাথায় পিস্তল তাক, আদালতে ডিবি পুলিশসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর সময় এক নারীকে লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করার ঘটনায় আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মারধর ও লুটপাটের অভিযোগও আনা হয়।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সিনিয়র জুডিশিয়াল হাকিম ও দ্রুত বিচার আদালতে ভুক্তভোগী বন্যা বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম এক আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে ঘটনার তদন্ত কাজ করেছে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল। বুধবার (১৫ মে) এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত দল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, সদর উপজেলার থলিয়ারা গ্রামের বন্যা বেগমের স্বামী নূরে আলমের বিরুদ্ধে সদর থানায় গত ২ এপ্রিল মিথ্যা মামলা দায়ের করেন এনামুল হক নামে নামে এক ব্যক্তি। এরই জের ধরে গত ১০ মে বিকেলে মামলার বাদী সদর উপজেলার চান্দিয়ারা গ্রামের এনামুল হক দলবল নিয়ে নূরে আলমের বাড়িতে প্রবেশ করে। নূরে আলম বাড়িতে নাই বললে অন্যান্য আসামিসহ গোয়েন্দা পুলিশের এস আই রেজাউল করিম লুটপাট ও বাড়ির লোকজনের ওপর অত্যাচার করে। বন্যা বেগমের মাথায় পিস্তল তাক করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় গুলিও ছোড়া হয়। তাদের অত্যাচার থেকে বাদ যায়নি বন্যা বেগমের নয় বছরের সন্তান নিশাত। ওইদিন বাড়ি সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী শওকত আলী জানান, মামলায় এনামুল হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আটজনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ত্রুটি থাকায় সোমবার জমা দিয়েও তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, থলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় মামলা হয়। এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয় নুরুল ইসলাম সৌদি থেকে স্বর্ণ এনে তাকে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি। শুক্রবার বিকেলে নুরুল ইসলাম বাড়িতে থাকার খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশে ধস্তাধস্তি হয়। ঘটনার একটি ভিডিওতে পুলিশকে পিস্তল তাক করতে দেখা যায়। তবে আসামি না পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে চলে আসে। ঘটনার তদন্তের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, মামলার বাদী আব্দুল কুদ্দুসকে প্রবাসে ব্যবসায়িক অংশীদার না করায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খৎনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় পাঁচ-ছয়জন সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয় তল্লাশি শুরু করে। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ সময় লুটপাটও করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন অর্থাৎ নির্ধারিত বুধবারই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন তাহলে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযান পরিচালনার সময় কেউ যদি পুলিশের সঙ্গে কিছু করে থাকে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার হবে বলে জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন