Daily News BD Online

মীরসরাইয়ে দেশের প্রথম মিয়াওয়াকি ফরেস্ট

 


পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে মীরসরাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কৃত্রিম বন মিয়াওয়াকি ফরেস্ট। পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি এই বন প্রকৃতিপ্রেমী ও গবেষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে পরিবেশ সংরক্ষণের একটি টেকসই মডেল তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সোনাপাহাড় এলাকায় মিয়াওয়াকি বনটি ঘুরে দেখা যায়সবুজের আবরণে সজ্জিত প্রকল্পটি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ উপস্থাপনা। টিলাশ্রেণির মাটির কোল ঘেঁষে ৪ হাজার ৪০০ বর্গফুটের এই বনটি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। ১৫ মাস বয়সী ১৭ ফুট উচ্চতার বনটিকে দূর থেকে একবার তাকালেই মনে হবেএটি যেন এক যুগ পুরোনো এক অরণ্য। বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে ১২০ প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্মের মনোমুগ্ধকর সমাবেশ। প্রকৃতির এই জীবন্ত প্রদর্শনী যেন সত্যিই গাছের একটি জাদুঘর।

জানা গেছেমিয়াওয়াকি ফরেস্টের ধারণার প্রবক্তা হচ্ছেন জাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকি। এ পদ্ধতিতে ছোট ছোট জায়গায় অল্প সময়ে বয়স্ক বনের আদল তৈরি করা যায়। তার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মাত্র ৩০ বর্গফুটের মধ্যেও বন তৈরি করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে লাগানো গাছ সাধারণ বনের গাছের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। বছরে অন্তত এক মিটার বাড়ে। মিয়াওয়াকি উদ্ভাবিত এই বন তৈরির পদ্ধতি ব্যবহার করে কোনো স্থানে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে গভীর বন তৈরি করা সম্ভব। বর্তমানে আকিরা মিয়াওয়াকির এই ধারণা কাজে লাগিয়ে নেদারল্যান্ডস ও ভারত তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিয়াওয়াকি ফরেস্ট গড়ে তুলে সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশে মীরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় প্রকল্প সোনাপাহাড় প্রকল্পে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এই মিয়াওয়াকি ফরেস্ট ধারণার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প সোনাপাহাড় কর্মকর্তা ফজলুল হক ও ইঞ্জিনিয়ার মোশামীম শেখ জানানজাপানের বিখ্যাত উদ্ভিদবিদ আকিরা মিয়াওয়াকির উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে ও প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও পরিচালক দেলোয়ার জাহানের পরামর্শে অল্প জায়গায় ঘন বনায়ন মিয়াওয়াকি ফরেস্ট তৈরির চেষ্টা অনেকটাই সফল হয়েছে।

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন বলেনএই জায়গায় একসময় পাহাড় কাটামাটি কাটা এবং ইটভাটার কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস করা হতো। এখন এই জায়গা পরিবেশ পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পটি শুধু পরিবেশ রক্ষার নয়গবেষকশিক্ষার্থী এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি জীবন্ত গবেষণাগারে রূপ নিয়েছে।

প্রকল্পের পরামর্শক দেলোয়ার জাহান জানানমাটি প্রস্তুতজৈব উপাদান সংযোজন এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে বনায়ন করা হয়েছে। সাধারণ বন থেকে এই বন ১০ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ৩০ গুণ বেশি কার্বনডাইঅঙাইড শোষণ করতে পারে। এই প্রকল্পে স্থানীয় গাছের প্রজাতি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি গভীর বন তৈরি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের মীরসরাই রেঞ্জ অফিসার মোশাহান শাহ্‌ নওশাদ বলেনআমি কৃত্রিম বন মিয়াওয়াকি ফরেস্ট ও পর্যটন স্পটটি পরিদর্শন করেছি। এই বনটি দেশের প্রথম কৃত্রিম বন কিনা জানা নেই তবে এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী ও পরিবেশ সংরক্ষণের দৃষ্টান্ত। বন সৃষ্টির এই পদ্ধতি দেশজ প্রজাতির গাছ রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন