মুরাদনগরে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী অলি উল্লার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মুরাদনগরে মায়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের ফাঁসির দাবিতে নানির কোলে  শিশু ফরহাদ এর প্রতিবাদ। ছবি : ডেইলি নিউজ

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি :

কুমিল্লা মুরাদনগরগ উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৈজুরী গ্রামের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী  বজলু মিয়ার ছেলে অলি উল্লার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও   মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার বিকেলে কৈজুরী গ্রামের দক্ষিণ পাড়া নিহত ফাহিমার বাড়ীর সামনে রাস্তায় শত শত নারী পুরুষের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত অলি উল্লাকে গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য যে, গত রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৈজুরী গ্রামের কামাল মিয়ার মেয়ে ফাহিমা আক্তার পরকীয়া প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিষ পানে আত্মহত্যা করে।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ বছর আগে ফাহিমা আক্তার কে একই উপজেলার মাহুতিকান্দা গ্রামের আইয়ুব আলির ছেলে হাবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বিয়ের পর ফাহিমা আক্তার তার নিজ গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে অলিউল্লাহর সাথে পরকীয়া জড়িয়ে পড়ে। অলিউল্লাহ নিজেও ছিলেন বিবাহিত। পরে অলিউল্লাহর পরামর্শে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফাহিমা আক্তার তার স্বামী হাবিবুর রহমানকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে।

তাদের ৪ বছরের সংসার জীবনে আড়াই বছরের ফরহাদ হোসেন নামের  একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ফাহিমা আক্তার তার বাবার বাড়ি আসার পর  অলিউল্লাহ তার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় পার করে।
ফেব্রুয়ারিতে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আসলে ও গত প্রায় দের বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ফাহিমাকে ধর্ষণ করে যাচ্ছ। বিভিন্ন ভাবে ফাহিমার কাছ থেকে নগদ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ও দের ভরি সোনার গহনা হাতিয়ে নেয় লম্প অলি উল্লাহ।

বিষয়টি গ্রামবাসীদের মাঝে জানাজানি হলে গত ৯ এপ্রিল অলিউল্লার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে অলিউল্লাহকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশের পর অলিউল্লাহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে  সেই জরিমানার টাকা দিতে গরিমুষী করে।
এদিকে অলিউল্লাহকে বিয়ে করার জন্য ফাহিমা আক্তার বারবার বাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করছিল।
শালিস দরবারে জরিমানার টাকা না দিতে আবারো ফাহিমাকে ফাঁদে ফেলতে কোটে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফাহিমাকে ঘর থেকে বের করার চেষ্টা করে অলি উল্লাহ। অলি উল্লার ফাঁদে পড়ে ঘর থেকে বের হতে ব্যকুল হয়ে ছটফট করতে থাকলে ফাহিমার মা জুলেখা বেগম মেয়েকে ঘরে রাখার চেষ্টা করে।

তারই জের ধরে রবিবার সন্ধ্যায় ফাহিমার মা  তার মেয়েকে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। রাত ১২টার দিকে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ফাহিমা বিষ পান করলে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন ফাহিমা।

সোমবার রাতে ময়তদন্ত শেষে গ্রামের কবরস্থানে ফাহিমার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।


সোমবারে সকালে নিহত ফাহিমার মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনায়  অলি উল্লাহকে প্রধান আসামী করে ৩ জনের নামে মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহত ফাহিমার মা জুলেখা বেগম বলেন, আমার মেয়ের আত্মহত্যার জন্য অলিউল্লাহ দায়ী। সেই বিয়ের  প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে প্রথমে স্বামীর ঘর ছাড়া করেছে। আর এখন তার জন্যই আমার মেয়ে দুনিয়া ছাড়া হয়ে গেছে।
আমি আমার মেয়েকে ছাড়া ঘরে থাকতে পারিনা,আমি আমার মেয়ের কাপরগুলো বুকে জড়িয়ে মেয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছি। আমার একটি আড়াই  বছরের নাতি আছে, তার কি হবে? আমি তার কঠিন বিচার চাই। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ফাহিমার মা জুলেখা বেগম, বাবা কামাল হোসেন, প্রতিবেশী মৌসুমি আক্তার, জোসনা বেগম, মালেকা বেগম, কাজল মিয়া, চান মিয়া,খলিলুর রহমান আলম মিয়া, আতাউর রহমানসহ আরো অনেকে।

অভিযুক্ত অলিউল্লাহর মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায়  আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ৩ জনের নামে একটি  মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের অভিযান চলছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন