‘বুড়া বয়সে ধর্ষণের অপবাদ নিয়ে বাঁচার চেয়ে মরাই ভালা’

 


‘আমার স্বামী মারা গেছে ৮ বছর আগে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মা আমি। ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। এখন বুড়া বয়সে আমার মানইজ্জত সব গেছে। বুড়া বয়সে ধর্ষণের অপবাদ নিয়ে বাঁচার থেকে মরাই ভালা।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধ নারী (৫৩)।

তিনি আরো বলেন, স্বামী মরার পর থেকেই পাশের বাড়ির জমশেদ আমারে নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। আমার ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। গভীর রাতে আমার ছেলে পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন জমশেদ। দরজা খুলতেই জমশেদ ঘরে ঢুকে আমাকে মারধর করে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি লোকলজ্জায় কাউকে বুঝতে না দিলেও জানাজানি হয়। পরে থানায় মামলা করেছি। মামলার পর থেকেই তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ অথবা কেউ আসলেই তারা আমার বাড়িতে এসে গালমন্দ করে হুমকি দিয়ে যায়। আসমিও বাড়িতে প্রকাশ্যে ঘুরছে।

অভিযুক্ত জমশেদ মিয়া (৪৮) নেত্রকোনার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের জাহেদ মুন্সির ছেলে এবং বর্তমান ইউপি সদস্য বকুল মিয়ার ভাই।  

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী জাহেদ মুন্সির ছেলে জমসেদ মিয়া (৪৫) প্রায় সময়েই কুপ্রস্তাব দিত। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর ছেলে বেড়ানোর জন্য স্ত্রী নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যান। ওই সুযোগে প্রতিবেশী জমসেদ মিয়া ওই নারীর ঘরে ঢুকে তাকে মারধর করে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনাটি কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। বৃদ্ধা নারী লোক লজ্জা ও প্রাণের ভয়ে কাউকে কিছু বলার সাহস পায়নি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১১ মার্চ মদন থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রজু হয়। মামলার পর থেকে আসামি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

তবে ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি ধর্ষিতা হলেও থানায় মামলা হয়েছে ধর্ষণ চেষ্টার। এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আসামি জমশেদ মিয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য বকুল মিয়ার সহোদর ভাই। তার আরেক ভাই হিরন মিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা এলাকার লাঠিয়াল প্রকৃতির লোক হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। মামলার পর থেকে ওই নারী ও তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তার বাড়িতে গিয়ে গালমন্দসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

আসামির ভাই বর্তমান ইউপি সদস্য বকুল মিয়া জানান, আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা কিছুই হবে না। এই মামলা কবেই খাইয়া পালাইছি। এই মহিলারে যে কোথায় নিব সে নিজেই জানে না।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, ভিকটিমের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রজু হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন