মানিকগঞ্জে সাটুরিয়ার গাজীখালী নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বেইলি সেতু এখন মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। সেতু নির্মাণের পর থেকে সংস্কার না করায় সেতুটি ভগ্নদশায় পরিনত হয়েছে। এ মৌসুমের ১ম বৃষ্টিতে সেতুটি এক পাশ ৫ ফুট মাটির নিচে ডেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। সংযোগ সড়ক থেকে সেতু বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় অর্থশতাধিক এলাকার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
এদিকে সেতুটি প্রায় ১ মাস ধরে ধসে পরে যাওয়ার পরও একটি সর্তকতামূলক ব্যানার টাঙ্গানো ছাড়া কিছুই করেননি। অপরদিকে সংস্কার করে দেবার পরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফলতি ও কাজ শুরু না করলে, সাটুরিয়া-গোলড়া সড়ক অবরোধ করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত গাজীখালী নদীর ওপর ডাইবেশন সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের চলাচল করে থাকেন। সাটুরিয়া, ধামরাই ও নাগরপুরের মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন সাটুরিয়া ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমল্পেক্স। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার হাটের দিন কয়েক হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে থাকেন। অনেক শিশু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ সেতু পার হওয়ার সময় গর্তে পরে আহত হয়েছে।
সাটুরিয়া হাট হয় বৃহস্পতিবার ও রোববার হরগজের হাটের দিন সাটুরিয়া বাজারের সাথে মানিকগঞ্জ সড়কের সংযোগ হয়েছে আর সিসি সেতু দিয়ে। কিন্তু দুই হাটের দিন যানবাহনের এত চাপ পড়ে যে, তখন এই বেইল সেতু দিয়ে বিকল্পভাবে দ্রুত পার হতে পারে। তাছাড়া সাটুরিয়া বাজারের পশ্চিম অংশের প্রায় ২ শতাধিক দোকানী ও এর ক্রেতারা এই বিকল্প সেতু ব্যবহার করলে ৩০ মিনিট সময় কম লাগে। এতে এই সেতুটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ সর্তকবাণী দিয়ে ব্যানারে লিখেছেন সাবধান ক্ষতিগ্রস্থ বেইলি সেতু। এই বিকল্প সেতু দিয়ে জনসাধারণের চলাচল নিষেধ। আদেশক্রমে নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগ মানিকগঞ্জ। একটি সাইনবোর্ড দিয়েই দায় সেরেছেন সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষে আদেশ তোয়াক্কা না করে জনসাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছেন।
জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থ বছরে গাজীখালী নদীর উপর সাটুরিয়া বাজার সংলগ্ন একমাত্র ব্রিজ নির্মাণ করার প্রকল্প পাশ হয়। ২০১৩ সালে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এই বেইলী ব্রীজটি বিকল্প সেতু হিসেবে স্থাপন করা হয়। বেইলি ব্রীজ হয়ে উঠে বিকল্প ও হাসপতাল ও কলেজ ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও সাধারণ জনগণের চলাচলের সহজ মাধ্যম। ফলে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য নতুন ব্রিজ খুলে দেওয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠায় এটি আর অপসরাণ করতে বাধা দেয় স্থানীয়রা।
বিগত (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখায় যায়, বিকল্প রাস্তার ডাইবেশরে ওপর স্টিলের বেইলি সেতু তিনভাগের একাংশ ৫ ফুট মাটির নিচে ডেবে কাত হয়ে গেছে। সেতুর দুইপাশের একপাশ সংযোগ সড়ক থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেতুর পিলারের সাথে রয়েছে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মাটি সরে যাওয়ায় যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ার আশংক্ষা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গাজীখালী নদীর ওপর মূল ব্রিজ দিয়ে বেশির ভাগ সময় গাড়ি চলাচল করে থাকে। আর বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করে থাকেন সময় বাঁচানোর জন্য। ওই ডাইবেশন সেতুর সাথেই সাটুরিয়া উপজেলা ৫০ শস্যা স্্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চারটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাটে বেচাকেনা করা হয় ওই বিকল্প সেতু দিয়েই।
সাটুরিয়ার ঔষধ ব্যবসায়ী মো. লিয়াকত আলী বলেন, বিকল্প সেতু দিয়ে প্রতিদিন কিন্ডার গার্ডেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি বেসরকারি স্কুল ও কলেজের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীরা ওই ঝুঁকিপূর্ণ নিয়ে পারাপার হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে সেতু কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে সংস্কার করার দাবী জানান।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিকল্প সেতুর পাতাটন মরিচা ধরে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সূষ্টি হয়েছে। সেতুর সব পাটাতন আগলা হওয়ায় রাতের বেলায় চলাচল করার সময় পথচারীরা অনেকে গর্তে পরে আহত হচ্ছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা পাতাটন গুলো নিজ খরচে জ্বালাই দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছি। বিশেষ করে হাসপাতাল আসা যাওয়া এ সেতু দিয়ে সহজ হওয়ায় রোগীরা বেশির ভাগ সময় ক্ষতিগ্রস্থ সেতু দিয়েই পারাপার হয়। দ্রুত সেতুটি সংস্কার করার দাবীও জানান তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার সরকার বলেন, এ সেতুটি সংস্কার করার জন্য গত ২৯ এপ্রিল-২৫ আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করি। তখন আমারেদর আশ্বাস ও দিয়েছিল। কিন্তু এখন কোন আপডেট পাচ্ছি না। এখন সংস্কার কাজ শুরু না করলে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী নিয়ে সাটুরিয়া-গোলড়া সড়কের সাটুরিয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ করব। তাই আমাদের দাবী জন গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দ্রুত সংস্কার ও কাজ শুরু করা হোক নইলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ সেতুটি আমি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছি। সেতুটি ঝকিপূর্ণ বলে জনসাধারণ মানুষকে চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এটি ছিল একটি বিকল্প সেতু। এটি একাধিকবার অপসারণের জন্য গেলেও তা জনসাধারণের অনুরোধ ও বাঁধার কারণে সেতুটি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। পাশেই একটি আর সিসি সেতু আছে বিধায় এখানে এই বেইলি সেতুটি সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ করার মত বরাদ্ধ আমাদের নিকট নেই। আমি আবারও বলছি পাশের আর সিসি সেতু দিয়ে চলাচল করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করছি।