রাজধানীর ডেমরা থানায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে রুজুকৃত মামলায় কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডেমরা থানা পুলিশ। সোমবার (১৯ মে) রাত ২টার দিকে ডেমরা থানাধীন স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নারী নির্যাতনের মামলায় আলোচিত-সমালোচিত সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২০ মে) ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, নোবেলের নামে ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সেই মামলার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ২০১৮ সালে নোবেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিচয় হয়। তিনি তখন ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। নোবেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রায় সময় কথাবার্তা বলতেন। এরপর নোবেলের সঙ্গে দেখাও করেন সেই তরুণী।
নোবেল তাকে নিজের স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরা থানা এলাকায় তার বর্তমান ঠিকানার বাসায় নিয়ে যান। এরপর সেই তরুণী ফিরতে চাইলে একপর্যায়ে আরো ২-৩ জন বিবাদীদের সহায়তায় তাকে সেই বাড়ির একটি কক্ষে আটক করে রাখেন নোবেল। এ সময় তার মোবাইল ফোনও ভেঙ্গে ফেলেন। সেই ঘরে আটক রেখে তরুণীকে ধর্ষন করেন নোবেল এবং ধর্ষনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। তার কথামতো না চললে মোবাইল ফোনে ধারনকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিবে বলেও হুমকি দেন।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, সেই তরুণী নোবেলের ভয়ে কাউকে কোনও কিছু বলার সাহস পাননিনি। নোবেল নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বিভিন্ন সময় তাকে মারপিট করতো। সম্প্রতি অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধনে টানা হেচড়া করে অপর একটি কক্ষে আটক করে রাখে নোবলে। সেই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সেই তরুণীর পিতামাতা তাকে চিনতে পারে।
এরপর পিতা-মাতা তার খোঁজাখুজি করা অবস্থায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে গতকাল সোমবার রাত অনুমান সাড়ে নয়টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে সেই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, সেই তরুণীকে গত বছরের নভেম্বর মাসে অপহরণ করে গতকাল পর্যন্ত সেই বাড়িতে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে। উদ্ধারের পর পরিবারের সহযোগিতায় নোবেলের নামে মামলা করেন সেই তরুণী, যার প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডেমরা থানা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং নোবেলের সাথে ভিকটিমের মাঝে মধ্যে মুঠোফোনে যোগাযোগ হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল ভুক্তভোগীর সাথে মোহাম্মদপুর গিয়ে দেখা করেন। এসময় ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে নিয়ে এসে ২-৩ সহযোগীর সহায়তায় তাকে বাসায় আটক রাখেন নোবেল।
![]() |
ছবি : দেলোয়ার হোসেন |
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এসময় নোবেল ভিকটিমের মোবাইল ভেঙে ফেলেন। পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর ও ধর্ষণ করেন। একই সঙ্গে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে সোমবার (১৯ মে) পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে বাসায় আটক রাখেন নোবেল।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেল কর্তৃক ভুক্তভোগীকে মারধরের একটি ভাইরাল হয়। এই ভিডিও দেখে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে। খবর পেয়ে ডেমরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।