এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
মাত্র ৯ বছর বয়েসী কন্যাশিশু ময়না। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে পড়তো। বাড়ি থেকে নিখোঁজের একদিন পর পার্শ্ববর্তী মহল্লার মসজিদের দু'তলা থেকে উদ্ধার হলো তার রক্তাক্ত-বিবস্ত্র মরদেহ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা এলাকার। পুলিশ লাশ মর্গে পাঠানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু'জনকে আটক করেছে।
রোববার (০৬ জুলাই) সকালে জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর হাবেলিপাড়ার মসজিদ থেকে কন্যাশিশুটির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। নিহত মায়মুনা আক্তার ময়না (০৯) শাহবাজপুর ছন্দু মিয়া পাড়ার বাহরাইন প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। ময়না স্থানীয় লতিফ মোস্তারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে পড়াশোনা করতো।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে ময়না শনিবার বিকেলে খেলাধুলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকেই তার কোনো সন্ধান মিলছিলো না। পরিবারের লোকেরা আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করাসহ মাইকিং পর্যন্ত করায়। রোববার সকাল স্থানীয় শিশুরা হাবেলীপাড়া মসজিদে গিয়ে দ্বিতীয় তলায় ময়নার রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পায়। এসময় মসজিদের ইমাম শিশুটির মাকে খবর দেন। পরে ময়নার পরিবারসহ গ্রামবাসী মসজিদে গিয়ে শিশুটির বস্ত্রহীন মরদেহে গলায় কাপড় প্যাঁচানা অবস্থায় দেখতে পায়। এদিকে বর্বরোচিত এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, পিবিআই ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করাসহ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য হাবেলীপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিনসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। নারকীয় এই ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানায়, এমন পৈশাচিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতেও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। মেয়েটির পড়নের পায়জামা দিয়ে গলায় প্যাঁচানো এবং সারা শরীর বিবস্ত্র ছিলো। নিহতের চাচা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি কোনো নরপশু আমার ভাতিজীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণের পর পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।' নিহতের মা লিপা আক্তার বলেন, 'এভাবে যেই নরপশু আমার মেয়েটারে মারছে, আমি হের (তার) এরচে' বেশি শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। তিলে তিলে যেন হের ফাঁসি হয়, আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। যে আমার নিষ্পাপ শিশুটিকে এরকম করতে পারছে, তার মনটা এতটুকু কাঁপলো না, সে কি কোনো মায়ের সন্তান নাকি অন্যকিছু? আমি প্রশাসনের কাছে সরকারের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।'
সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, 'সকালে শাহবাজপুর হাবেলিপাড়া মসজিদের দ্বিতীয় তলায় এক শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পিবিআইসহ থানা পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।'
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার জানান, 'নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জনকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এটি ধর্ষণের পর হত্যা কীনা সেটি জানতে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।'