* রাতভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, শনাক্ত দুজনকে ধরতে পুলিশের অভিযান
* জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রী পুলিশ হেফাজতে
মো. লুৎফর রহমান (খাজা শাহ্) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) জুবায়েদ হোসাইন নামে এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আরমানিটোলার পানির পাম্প গলিতে টিউশনির বাসার সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জুবায়েদ আরমানিটোলা পানির পাম্প গলির ১৫নং নূর বক্স লেনে বর্ষা নামে উচ্চ মাধ্যমিক এক শিক্ষার্থীকে পড়াতেন। পুলিশের ধারণা তাকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতেই ওই ছাত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে দুজনকে শনাক্ত করাও হয়েছে। তাদের ধরতে চালানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান।
এদিকে জুবায়েদকে হত্যার প্রতিবাদে রাতভর বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নিহত শিক্ষার্থী জোবায়েদের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি জবিস্থ কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্য দিনের মতো রোববার সন্ধ্যায় জুবায়েদ পড়াতে যান। পরে স্থানীয় লোকজন ছয়তলা ওই বাসার তৃতীয় তলার সিঁড়িতে তাকে রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। তার পরনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত জার্সি ছিল। তাতে তার নামও ছিল। এটি দেখে লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন দেন। খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হন।
এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ফরেনসিক টিম আসার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, জুবায়েদ হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। জবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে এসে দেখি আরমানিটোলার নূর বক্স লেনের একটি বাসার তিনতলার সিঁড়িতে ওর রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে।’ জবি ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, লাশটি সিঁড়ির ওপর রেলিং-এর সঙ্গে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। তাই আঘাতটি কোথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। তার বুকে বা গলায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি। তারা সেটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।
যে ভবনে জুবায়েদের লাশ পাওয়া গেছে সেখানে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন তার সহপাঠী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াসউদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে দুজন, ধরতে অভিযান করছে পুলিশ : এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুজনকে প্রাথমিকভাবে তারা শনাক্ত করেছে। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে দুজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। বিল্ডিংয়ের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান : এদিকে জোবায়েদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে রাতেই তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন। এ সময় ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’সহ তারা নানা স্লোগান দেন। রাত ১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শোক প্রকাশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির।
ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ : জোবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী বর্ষাকে রাতেই হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। রাত ১১টার দিকে আরমানিটোলার ১৫ নূরবক্স রোড়ের (রৌশান ভিলা) বাসা থেকে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। যদিও তাকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে লালবাগ জোনের ডিসি ওই ছাত্রীর পরিবার ও বাসার অন্যান্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ ব্যাপারে খুনিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।