আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) :
মেলা মানেই আনন্দ, উৎসব আর কোলাহল। তবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বসে এমন এক ব্যতিক্রমী মেলা যেখানে ক্রেতা হিসেবে প্রবেশাধিকার শুধুই নারীদের। মেলার নাম ‘বউ মেলা’। শত বছরের ঐতিহ্য ধরে এই মেলা এখন ফুলবাড়ীর সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির চত্বরে দিনব্যাপী এই ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও লক্ষীপূজা উপলক্ষে পূজার পরের দিন মেলাটি বসে।
মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে পুরুষ ক্রেতাদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নারী বিক্রেতা যেমন থাকেন, তেমনি পুরুষ বিক্রেতারাও দোকান বসান, কিন্তু ক্রেতা হিসেবে অংশ নিতে পারেন শুধু নারীরাই। তাই একে ঘিরেই এর নামকরণ ‘বউ মেলা’।
মেলার আগের দিন থেকেই এলাকায় মাইকিং করে প্রচার করা হয় “আগামীকাল শুধুই নারীদের মেলা!” সকাল থেকেই চলে প্রস্তুতি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মেলা প্রাঙ্গণে জমে ওঠে নানা বয়সী নারীদের পদচারণা।
শামিয়ানার নিচে সাজানো দোকানগুলোতে মেয়েদের প্রসাধনী, শিশুদের খেলনা, হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, গৃহস্থালির পণ্য ও মুখরোচক খাবারের সমাহার। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, অন্যান্য ধর্মের নারীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা ও আনন্দে অংশ নেন।
মেলায় আসা এক নারী ক্রেতা বলেন, “এই মেলাটা আমাদের জন্য আলাদা আনন্দের। এখানে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করা যায়, গল্প করা যায় দিনটা কাটে উৎসবের মতো।”
মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস বলেন, “লক্ষীপূজা উপলক্ষে শত বছর আগে স্থানীয় জমিদার বিমল বাবু এই বউ মেলার সূচনা করেন। এরপর থেকে প্রজন্ম ধরে আমরা এই আয়োজন চালিয়ে আসছি। মেলাটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য। নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। সন্ধ্যা ৭টার পর মেলা শেষ হলে পুরুষদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।”
নারীর স্বাধীনতা, উৎসব ও আনন্দকে কেন্দ্র করে এই ‘বউ মেলা’ আজও ফুলবাড়ীর সংস্কৃতির গর্ব হয়ে আছে। শত বছরের ঐতিহ্য বয়ে চলা এই মেলায় প্রতিটি হাসিমুখ যেন বলে “একদিন অন্তত সবকিছু আমাদেরই!”