কোটালীপাড়ায় মাছের খামারে ৫২ পরিবারে চরম দুর্ভোগ


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মাছের খামারের কারনে ৫২ পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। ভূক্তভোগী পরিবারগুলো বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। খোঁদ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছে মাছের খামার কর্তৃপক্ষ। 

উপজেলার মাদারবাড়ী মৌজার উত্তরপাড় ও জটিয়ারবাড়ি গ্রামে ২৪০ বিঘা কৃষি জমিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জহুর আলী মিয়া কয়েকজন ব্যক্তিদের নিয়ে বর্ষাকালীন ৬ থেকে ৮ মাসের জন্য মাদারবাড়ী-কুঞ্জবন ভাই ভাই মৎস্য খামার পরিচালনা শুরু করেন গত বছর থেকে। মাছের খামারের মাঝে বসবাস করা পরিবারগুলো এখন  তাদের বসতবাড়ির অস্তিত্ব হারানোর শঙ্কায় ভূগছেন।

ভূক্তভোগীদের দাবী প্রভাবশালী এই চক্রের মুখে প্রশাসনও যেন অসহায় হয়ে পড়ছে। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: মাসুম বিল্লাহ ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ উপস্থিত থেকে পানি অপসারনের জন্য স্লুইচ গেটের বাঁধ কেটে দিলেও রাতের আধাঁরে পুনরায় বাঁধ দেয় খামার কতৃপক্ষ। একই সাথে প্রশাসনের দেওয়া ৯ টি নির্দেশনা মানার জন্য মাছের খামার কতৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেও ১টি নির্দেশনাও মানেননি। খোঁদ প্রশাসনকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী এই চক্র।

মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানি আটকিয়ে ৬ থেকে ৭ মাস এই মাছের খামারে মাছ চাষ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ গত বছর প্রথম এই মাছের চাষ করার সময় দুর্ভোগের বিষয়টি বুঝতে না পারলেও দুই মাস যেতেই দুর্ভোগে পড়েন মাছের খামারের ভিতরে বসত করা ৫২ টি পরিবার। স্লুইস গেট গুলো বন্ধ থাকায় জমির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় একদিকে পরিবারগুলো হয়ে পড়ে পানি বন্দি। অন্যদিকে মাছে বসত বাড়ি ও পুকুরের পাড়ের মাটি খেয়ে ফেলায় ভেঙ্গে পড়ে পুকুর ও বসত বাড়ির পাড়। তাছাড়া প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ায় ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ভিটা ও পুকুর। গত বছর মাছ তোলার পর খামারটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলা হলেও এবছর পুনরায় জোরপূর্বক মাছ চাষ করা হয়।


ভূক্তভোগী খোকন শিকদার বলেন, মাছের ঘেরের মধ্যে ৫২টি পরিবারের বসতবাড়ির মাটি ধসে পড়ে বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা বনজ ও ফলজ গাছ ভেঙ্গে পড়ছে। মাছে অতিরিক্ত সার, খৈল ও রাসায়নিক ব্যবহার করায় পানি পচে দুর্গন্ধ হচ্ছে। বর্ষাকালে এই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সময়মত পানি নিষ্কাষণ না করায় সঠিক সময়ে ইরিধানের বীজতলায় বীজ বপন করা যাচ্ছে না। শুধু বসতবাড়িঘরই নয় সরকারি রাস্তাও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে এই মাছের ঘেরের কারনে। ইতিমধ্যে রাস্তার পাশের সরকারি গাছও ভেঙ্গে পড়েছে ঘেরের ভিতরে। তিনি আরো জানান, আমাদের এই দুর্ভোগের চিত্র গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক স্যারকে জানালে তিনি এসিল্যান্ড স্যারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এসিল্যান্ড স্যারের কোন নির্দেশনাও মানছেন না এই প্রভাবশালী মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী বলেন, মাছের ঘেরের কারনে ভাঙ্গনের মুখে পড়ে কয়েকটি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বড় ভাই জহুর আলী মিয়ার তত্বাবধানে এই ঘের পরিচালিত হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছেন না। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। 

নুর ইসলাম শেখ নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের বাড়িঘর, গাছপালা সব ভেঙে পড়ছে মাছের ঘেরে। আমরা গরীব মানুষ। কার কাছে যাবো। কে শুনবে আমাদের কথা। টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে গেছে। প্রশাসনও যেখানে নিরব রয়েছে সেখানে আমরা আর বিচার দিবো কার কাছে। 

মাছের খামার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুর আলী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা দিয়ে থাকি।  তবে সাম্প্রতিক সময়ের বিষয়গুলো আমার জানা নেই। আমি ওমরা হজ্জে ছিলাম।

মৎস্য খামারের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, গত বছরে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবারও দেওয়া হবে। প্রশাসনের নির্দেশনা মানা হবে। তবে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।  প্রশাসনের উদ্যোগে কেটে দেওয়া স্লুইস গেটের বাঁধ পুনরায় আটকে দেওয়াটা ঠিক করা হয়নি।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘেরের পানি অপসারনের জন্য স্লুইচ গেটের বাঁধ কেটে দিয়ে ১৫ দিনের সময় বেঁধে কিছু শর্ত দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্থদের সমস্যা সমাধানের জন্য। আমরা জানতে পারছি ঘের কতৃপক্ষ প্রশাসনের কেটে দেওয়া বাঁধ আটকিয়ে দিয়েছে এবং একটি শর্তও তারা মানেননি। আমারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধারেনর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, আমি মাতৃত্বজনিত কারনে ছুটিতে ছিলাম। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মাছের খামারের কারনে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকলে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন