ঝিনাইদহে জেলা প্রশাসকদের অনাহূত উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ, অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন


সুলতান আল এনাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

 ঝিনাইদহের তিনজন বিতর্কিত সাবেক জেলা প্রশাসকদের অনাহূত উন্নয়ন নিয়ে শহরবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সরকারি কোনো আনুষ্ঠানিক বরাদ্দ না থাকলেও তিনজন জেলা প্রশাসক নানা স্থাপনা নির্মাণ করে বিতর্কের জন্ম দেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাদের করা এসব স্থাপনা এখন পরিণত হয়েছে অযতনের প্রতীকে।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে ২০১৭ সালে ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ‘ডিসি মিনি ইকো পার্ক’ নির্মাণ করেন। এ কাজে আর্থিক সহায়তা করেন জাহেদী ফাউন্ডেশন। তবে বর্তমানে পার্কটি অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকায় সৌন্দর্যের পরিবর্তে শোভা বিনষ্ট করছে।

জাহেদী ফাউন্ডেশন ছাড়াও টিআর, কাবিখা ও কাবিটা থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে অর্থ বরাদ্দ নেন জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার। আট বছর আগে ‘ডিসি মিনি ইকো পার্ক’ নির্মাণ করা হলেও এই অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে কোন আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় পার্কটি এখন ভাঙ্গা হাটে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, ২০১৮ সালে রাতের ভোটের করিগর জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ একইভাবে তার প্রশাসকের দপ্তরের সামনে পদ্মপুকুর স্থাপন এবং পুরাতন ডিসি কোর্টের সামনে ঝিনুক আকৃতির স্থাপনা নির্মাণ করেন। সময়ের ব্যবধানে এসব স্থাপনাও এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ, ২০২৪ সালের রাতের ভোটের কারিগর ফ্যাসিষ্ট জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই একাধিক উন্নয়ন কাজ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে অর্ধকোটি টাকা ব্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সুউচ্চ ম্যুরাল স্থাপন করে তিনি বিতর্কের জন্ম দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব উদ্যোগে সরকারি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয়নি এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্মিত শেখ মুজিবের সেই ম্যুরালটি ভেঙে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করেই ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি পুরানো ডিসি কোর্টের বিশাল আঙ্গিনায় বিধি বহির্ভূতভাবে লং টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট ও অফিসার্স ক্লাব তৈরী করেন। এই স্থাপনা তৈরি করতে গিয়ে তিনি জেলা নির্বাচন অফিসের সম্মুখভাগ দখল করে সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ।

ঝিনাইদহ ফোরামের সভাপতি ও সাবেক প্রিন্সিপাল মহাব্বত হোসেন টিপু বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এসব স্থাপনা এখন অসাড় হয়ে পড়েছে। পরিকল্পনা ছাড়া নির্মাণ মানেই অপচয়। বিশেষ করে পুরানো ডিসি কোর্টের মধ্যে আগে বই মেলা, বৃক্ষমেলাসহ নানা অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু সাবেক এক জেলা প্রশাসক তার নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে বিতর্কিত সব স্থাপনা তৈরি করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকারি অফিসের সামনে কি করে লং টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট ও অফিসার্স ক্লাবের সাইনবোর্ড উঠতে পারে? তিনি ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অপরিকল্পিত স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান।

ঝিনাইদহ সনাক সভাপতি এম সাইফুল মাবুদ বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে মানুষ এসব কর্মকান্ড ভালো চোখে দেখছে না। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। তিনি বলেন, এসব অনাহূত উন্নয়ন প্রকল্প একদিকে সরকারি সম্পদের অপচয় ঘটিয়েছে। এছাড়া এত ব্যয়বহুল কাজের অর্থ এলো কোথা থেকে তার সচ্ছতা থাকা দরকার ছিল।

সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি সাইদুল আলম বলেন, এসব উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয় লুটপাটের জন্যই করা হয়েছিল। জনগণের অর্থের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

ঝিনাইদহের একাধিক অনাহূত উন্নয়ন নিয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, এ ধরনের উন্নয়ন গ্রহণ করা ঠিক হয়নি। সরকারি দপ্তর বিশেষ করে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ছাড়া এমন উদ্যোগ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য করে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন করার ফলে তা গণপূর্ত বিভাগ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগ দিয়ে দেখভাল করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন