নওগাঁর পত্নীতলায় নারী আনসার সদস্যকে কুপ্রস্তাব ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ


— এলাকায় তীব্র ক্ষোভ, ন্যায়ের আশায় ভুক্তভোগী

এ.বি.এম. হাবিব : নওগাঁর পত্নীতলার এক শান্ত, নীরব গ্রাম হঠাৎই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আমাইর ইউনিয়নের দাসনগর গ্রামের আনসার ভিডিপি কমান্ডার আব্দুল রহমানের বিরুদ্ধে একই প্রতিষ্ঠানের নারী সদস্য মোছা: নারগিস পারভিনকে কুপ্রস্তাব, স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া এবং জোরপূর্বক শ্লীলতাহানির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারগিস পারভিন গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সকল বিষয়ে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নানান অজুহাতে একা ডেকে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন কমান্ডার আব্দুল রহমান। যদিও সে তার সম্পর্কে ভাসুর হয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া, দূরে ডিউটি পাঠানোসহ নানান ভয়ভীতি দেখানো হতো। শুধু কর্মস্থলেই নয়—বাড়িতে তার ছোট মুদি দোকানে একদিন হঠাৎ ঢুকে স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয় ও পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

নারগিস পারভীনের ভাষায়, “আমি প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাকে ভয় দেখিয়ে চলে যায়। ডিউটিতে গেলেও একা পেলে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে, জোর করে  জড়িয়ে ধরে এবং খারাপ সম্পর্ক করতে চাইতো। এতদিন ধরে এসব সহ্য করতে করতে আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি।”

ঘটনা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে স্বামীকে জানালে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগের পর দীর্ঘদিন পার হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে ভুক্তভোগীর। তিনি জানান, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুভাষ তাকে ডেকে জানায়—অভিযুক্ত কমান্ডার নাকি থানায় এসে ‘মুসুলেকা’ দেবে এবং আর এমন কাজ কখনো করবে না।

এতে হতাশা আরও গভীর হয় নারগিসের মনে।

তার ক্ষোভ— “দিনের পর দিন শ্লীলতাহানির শিকার একজন নারীর জন্য কি একটি মুসলেকাই যথেষ্ট? ন্যায়বিচার না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া আর পথ থাকবে না।”

স্থানীয়রাও ঘটনাটির অভিযুক্ত ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার আব্দুর রহমানের কুপ্রস্তার দেওয়া ও জোরপূর্বক শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেওয়ার অডিও শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,—এ ধরনের দুঃচরিত্রের লোক কিভাবে এমন একটি দ্বায়ীত্বে থাকতে পারে। তার আন্ডারে অনেক নারী সদস্যও থাকে তাহলে একজন দায়িত্বশীল কমান্ডারের কাছ থেকে এমন আচরণ সমাজের জন্য লজ্জাজনক। প্রশাসনের কাছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিযুক্ত ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার আব্দুল রহমান অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি—

“আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”

জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ডার নাজমুল আসফাক বলেন, “অভিযোগটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। লিখিত অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পত্নীতলা থানার ওসি শাহ এনায়েতুর রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়টি নিয়ে গ্রামজুড়ে এখন তীব্র আলোচনা—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। সবাই একই কথা বলছে,অডিও রেকর্ড এর কুপ্রস্তাব দেওয়া ও বিভিন্ন ধরনের খারাপ ভাষা গুলো আব্দুর রহমানের কন্ঠ সঠিক ও নিশ্চিত আছে, তাতে কোন সন্ধেহ নেই।   একজন নারী যখন সাহস করে অভিযোগ তুলেছেন, তখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন