দেলোয়ার হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মাসুদ রানা পরিত্যক্ত একটি জমিতে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি শুরু করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এই চাষের পদ্ধতি দেখে তার সাথে যুক্ত হয়েছেন একই গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সংবাদ পেয়ে পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ লুৎফর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ চাষকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
আদা রোপণের মাত্র তিন মাসের মধ্যে গাছগুলোতে আদা হতে শুরু করবে।
সরজমিনে গেলে তরুণ উদ্যোক্তা মাসুদ রানা জানান, প্রথমে ইউটিউব চ্যানেল দেখে আদা চাষে আগ্রহী হন তিনি।এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন চাষ। প্রথমে ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করেন।পরীক্ষামূলক ত্রিশ শতাংশ জমিতে ৫০০০হাজার বস্তায় সেই মাটি ভরে টবের মতো করেন। এরপর প্রতিটি বস্তায় তিনটি করে আদার চারা রোপণ করবেন। রোপণের মাত্র এক মাসের মাথায় গাছ বড় হতে শুরু করবে৷ এরপর মাত্র তিন মাসের মধ্যে গাছগুলোর গোড়ায় আদা জন্মাবে। এ ভাবে আদা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, অল্প পুঁজিতে স্বল্প জমিতে অল্প শ্রমে খুব সহজেই এটি চাষ করা যায়। প্রতিটি বস্তায় প্রায় দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যাবে।
মাসুদ রানা আরও জানান, এটি একটি লাভজনক চাষ। এই আধুনিক চাষপদ্ধতিতে আদা গাছে পানির চাহিদা অনেক কম। আবার সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই সীমিত। এর বাহিরে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এভাবে আদা চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে চাষ করেছেন তিনি। এ বছর যদি লাভ ভালো হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করবেন বলে জানান এই তরুণ উদ্যোক্তা মাসুদ রানা ।
তিনি আরও জানান, একটি বস্তায় চারা রোপণ করতে মোট খরচ হবে ৩০ টাকা কিন্তু একেকটি বস্তায় আদা পাওয়া যাবে প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি। বর্তমানে দুই কেজি আদার বাজার মূল্য ২০০ টাকা।
একই গ্রামের অপর উদ্যোক্তা মুনজুরুল ইসলাম জানান, এভাবে আদা চাষ এর আগে আমি দেখিনি। এটি দেখার পরে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আমিসহ এ এলাকার বেশ কয়েকজন এভাবে আদা চাষ শুরু করেছেন। বস্তায় আদা চাষ খুবই সহজ। অল্প খরচে বেশি লাভ শুনে আমিও মাসুদ রানার সঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত হয়েছি।
পরিদর্শনকালে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান জানান, আদা চাষে গোরা পঁচা রোগ হয়। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়না। বস্তায় আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে খুবই সীমিত। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব৷ পাশাপাশি কেউ চাইলে বাসার ছাদে, বেলকোনিতে এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করতে পারে।যদি কেউ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে না চায় তবে নিজেদের আদার চাহিদা মেটাতেও এটি করতে পারে। এভাবে আদা চাষ করতে চাইলে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ আমাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
Tags
বাংলাদেশ