জেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় ১৮ হাজার ৬’শ সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর ১৩ হাজার ৬’শ ও ৫ হাজার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেচ্ছাসেবক রয়েছেন। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ ও প্রািণসম্পদ রক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৭’শ ৪৬টি। এসব কেন্দ্রে ১০ লাখ গবাদি পশু ও ৫ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নিতে পারবে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিকেল টিম। একইসাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ জেলার ৭ উপজেলায় খোলা হয়েছে ৮টি কন্ট্রোল রুম।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর উপ পরিচালক আব্দুর রশিদ বাসস’কে বলেন, ইতোমধ্যে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত পাওয়ার পর পরই জেলার সকল ইউনিটে ৬৮০ টি পয়েন্টে ৩টি করে সাংকেতিক পতাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। মাইকিংসহ সাইরেন বাজানো হচ্ছে। জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রচার প্রচারণা করা হচ্ছে। আমাদের সকল সেচ্ছাসেবকরা মাঠে কাজ করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসাইন বাসস’কে জানান, ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় আমাদের ৩’শ ৫০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৮ লাখ টাকা ও ১’শ ৬৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুদ রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ৫’শ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণ মজ্ঞুরী বাবদ ১৫ লাখ টাকার। আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাশাপাশি বিভিন্ন চরে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় ৬টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে সাগরে মাছ শিকার করা জেলেরা ট্রলার নিয়ে নিরাপদে উপকূলে ফিরেছেন। মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে নিরাপদে অবস্থান করার জন্য। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদ্যুল্লা বলেন, আমাদের প্রায় সকল সমূদ্রামী নৌ যান নিরাপদে ঘাটে এসেছে। স্থানীয় নদীতে যারা রয়েছেন, তারাও কূলে ফিরছেন। তাদের প্রচারণা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে জেলায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৯৮টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। জেলা সিভিল সার্জন ডা: কে এম শফিকুজ্জামান জানান, দুর্যোগে সাপে কামড় দেওয়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। মোখা মোকাবেলায় ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ ২১৮টি কমিউিনিটি ক্লিনিক, ২০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খায়ের হাট ৩০ শয্যা ও দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যা হাসপাতালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: ইন্দ্রজীৎ কুমার মন্ডল বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখায় জেলা প্রাণিসম্পদ রক্ষায় ২১ টি মেডিকেল ভেটেরিনারি টিম ও ৫টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক গঠন করা হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৩৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধ বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। তারপরও যেসব বাঁধ ঝুকিপূর্ণ মনে হচ্ছে সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। একইসাথে আমরা নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় জেলায় সকল ধরনের জরুরী পরিষেবা ২৪ ঘন্টা প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের প্রত্যেক ইউএনওদের এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া আছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি।
Tags
বাংলাদেশ