Daily News BD Online

লক্ষ্মীপুরে দেবত্তোর সম্পত্তি নিজের মেয়ে আর জামাতার নামে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ ওঠেছে পুরোহিতের বিরুদ্ধে পর্ব (১)


ডালিম কুমার দাস টিটু :
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জে মন্দিরের নামে দান করা (দেবত্তোর সম্পত্তি) জমি রেজিস্টার করলেন মন্দিরে থাকা পুরোহিত কেশব গোস্বামী। রেজিস্টার দিলেন নিজের মেয়ে পূর্ণিমা এবং মেয়ে জামাতা দিলিপ চক্রবর্তীকে । ৪০ বছর সম্পত্তি ভোগ দখল করেছেন পুরোহিত কেশব গোস্বামী । মন্দির কমিটিকে দেননি কোন হিসেব । হয়েছেন কোটিপতি । মন্দিরের উন্নয়নের টাকায় বিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে । লোভে পড়ে স্থানীয় কিছু কুচক্রির ফান্দে পড়ে মন্দিরের প্রায় ২ একর ২৩ ডিং সম্পত্তি গোপনে দলিল করে দিয়েছেন নিজের মেয়ে আর মেয়ে জামাতার নামে । বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠলেন জমি দাতা এবং স্থানীয়রা। লক্ষ্মীপুর থেকে সহকর্মী ডালিম কুমার দাস টিটুর পাঠানো তথ্য ও ছবিতে প্রতিবেদন । লক্ষ্মীপুর সদর  উপজেলার ১৭ নং ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের গোস্বামী বাড়ির শ্রী শ্রী জয় জগবন্ধু গোস্বামী মন্দির একটি প্রাচিন মন্দির । বহু বছর আগে থেকে এই মন্দিরটিতে বিভিন্নরকম অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে ভিড় করে জেলার সনাতনি ভক্তরা। প্রতিবছর মাঘ মাসের ১৪ তারিখে এই মন্দিরে নাম কির্ত্তণ হয় । নাম কির্ত্তণ শুনতে আসে জেলার দুর দুরান্ত থেকে সনাতনিরা। মন্দিরে পুজো দেয়ার জন্য একজন পুরোহিত সকল সন্দিরে প্রয়োজন হয় । তার ধারাবাহিকতায়র এই মন্দিরেও একজন পুরোহিত রাখা হয়েছে। পুরোহিতের নাম কেশব গোস্বামী। জানাযায় এই মন্দিরটি প্রায় দেড়শ বছর আগের পুরানো মন্দির । মন্দিরটিতে প্রথম পুরোহিত ছিলেন হারান গোস্বামী , তারপর তার মৃত্যুর পর উপানন্দ নামে একজন গোস্বামীকে দায়িত্ব দেয়া হয় , উপানন্দের মৃত্যুর পর কেশব গোস্বামীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি মন্দিরের পুজা অর্চ্চনা দিয়ে থাকেন । মন্দিরের বিভিন্ন দেখভালো করেন । দেবত্তর সম্পত্তি হিসেবে সম্পত্তির আয় ব্যায় দেখাশুনা করতেন মন্দিরের পুরোহিত  যখন যিনি  দায়িত্বে  ছিলেন । মন্দিরের আয়ের টাকায় মন্দির উন্নয়নের কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে পুরোহিত কেশব গোস্বামী নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স করে নিজের মেয়ের নামেও করেছেন ব্যালেন্স। হয়ে গেছেন কোটিপতি । আজ থেকে ১৪০/১৫০ বছর আগে মৃত ললিত মজুমদার ও দেবেন্দ্র মজুমদারের বাবা মৃত মাধব কবিরাজ  মন্দিরের নামে প্রায় ২৩০ শতাংশ জমি দান করেছেন । সেই সুবাধে এই সম্পত্তি দেবত্তোর সম্পত্তি হিসেবে গৃহিত হয়। বাবা-দাদাদের পর জমি দাতা হিসেবে মন্দিরের উন্নয়ন কার্যক্রমের এবং দেখভালো কাজের সাথে জড়িত আছেন তাদেরই উত্তরাধিকারি দিপক মজুমদার । দিপক মজুমদার বর্তমানে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন । হঠাৎ করে মন্দিরের এই সম্পত্তি পুরোহিত কেশব গোস্বামী তার নিজের সন্তান পূর্ণিমা ও তার জামাতা দিলিপকে উইল করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি মন্দির কমিটি জানতে পেরে গোপনে খবর নিতে থাকে । এবং সত্যতা পায় । বিষয়টি জানাজানি হলে কেশব নিজেকে কয়েকদিন আত্মগোপনেও রাখে । কিন্তু মন্দিরের পুরোহিত হিসেবে বেশিদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি । দীর্ঘদিন থেকে মন্দিরের সম্পত্তি নিজের নামে নেওয়ার জন্য নানান রকম ষড়যন্ত্র করে আসছেন তিনি।  গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় ৩/৪ বছর আগে মন্দিরের এই সম্পত্তি তিনি তার একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমা  এবং মেয়ের জামাই দিলিপ চক্রবর্তিকে উইল করে দিয়েছেন যাহা সম্পূর্ণ বেআইনি । তথ্য মতে যদি সম্পত্তি তার মেয়েকে দিয়েও থাকে তাহলে এই রেজিস্ট্রার কোনভাবে শুদ্ধ হবেনা। কারন দেবত্তোর সম্পত্তি কখনো ব্যাক্তি নামে রেজিস্টার করা যাবেনা । শুধু মন্দিরে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা সম্পত্তির দেখ ভালো করবে এবং মন্দিরের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করবে ।  মন্দিরের জমি রেজিস্ট্রারের কথা শুনে জমি দাতাদের একজন উত্তরাধিকারী দিপক মজুমদার কেশব গোস্বামীর বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলা করেন । সেই মামলারও কোন সঠিক জবাব দিলেননা কেশব।  এমতবস্থায় গত ২ মাস আগে স্থানীয়রা মিলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ তাকে সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার জন্য একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে জমি রেজিস্টারের বিষয়টি শিকার করে তা ফেরৎ দেয়ার কথাও তিনি শিকার করেন । কিন্তু কবে দিবে তা তিনি বলেননা । সাম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ সহ জেলার হিন্দু নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে পুরোহিতকে বুঝালেও তিনি বিষয়টি বুঝতে রাজি নয়। স্থানীয় একাধিক লোকজন বলেন যে কোন সময় গোপনে জমি বিক্রি করে রাতের অন্ধকারে পুরোহিত চলেও যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা সনাতনি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ক্ষোভ বিরাজ করছে । এবং মন্দিরের সম্পত্তি ফিরে পেতে সরকার এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন জেলার সনাতনি সম্প্রদায় । মন্দিরের সভাপতি বাবু এড. দুলাল কৃষ্ণ দাস বলেন, আশ্রমের নামে আশ্রমের নামাকরনে এই সম্পত্তিটি দান করা হয় । দান কালীন শর্ত ছিলো নিস্কর যারা আছেন তারা শুধু মাত্র সেবায়েত হিসেবে থাকবেন । খতিয়ানের কলামে লেখা আছে যারা সেবায়েত হিসেবে আজীবন থাকবেন এই সম্পত্তি দান বিক্রয় স্থানান্তর নামান্তর কিছুই করা যাবেনা। এই সম্পত্তির অর্ধেক অংশ ভুলবশত রেকর্ড লিপি হয় স্বর্ণপিয়া বৈষ্ণবের নামে । এমতবস্থায় কমিটির কাউকে না জানিয়ে সেবায়েত কেশব এবং তার জামাতা দিলিপ পরস্পর ২/৩ কবলা করে । যখন আমরা জানলাম তখন আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করি বর্তমানে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মকদ্দমাটা চলমান আছে। তিনি বলেন, যারা সেবায়েত আছেন তারা শুধুই মাত্র সেবায়েত আর কোন অধিকার তাদের নেই। কমিটির সয় সম্পত্তির সকল আয় ব্যায় দেখার জন্য কমিটিতে দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকজন আছেন। তাদের সাথে বিতর্ক হলো তারা কমিটির তত্বাবধানে এবং দেবত্তোর সম্পত্তির নিয়মনীতি অনুসারে চলিতে রাজি নয় । তারা তাদের ব্যাক্তি স্বার্থ হাছিল করার জন্য কিছু ইন্দনদাতার মাধ্যমে অবৈধভাবে কিছু দলিল সৃজন করছে । তিনি মনে করেন তারা অবৈধভাবে যেই দলিলগুলো করেছেন প্রকৃপক্ষে এই দলিল দিয়ে তারা কিছু করতে পারবেনা  ।  বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে ওঠেছেন জেলার সনাতনি নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয়রা । মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বাবু দিপক মজুমদার বলেন, আমার বাবা দাদারা এই সম্পত্তি দিয়ে গেছেন মন্দিরের নামে বর্তমানে সেবায়েত কেশব তার মেয়েকে এবং মেয়ে জামাতাকে জমিন রেজিস্ট্রি করার আমরা খবর পেয়েছি খোঁজ নিয়ে দেখেছি বিষয়টি সত্য আমরা আদালতে মামলা করেছি । আইনগত জবাব দেবো। (চলমান থাকবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন