Daily News BD Online

৬১ বছর পর পরিশোধ করলেন স্কুলের বকেয়া বেতন


আর আই রাজিব, ঝিনাইদহ :

অভাব অনটনের সংসার। দরিদ্র পিতা ঠিকমতো দিতে পারেননি লেখাপড়ার খরচ। তাই চার মাস স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে পারেননি। সেই লজ্জায় আর যাননি স্কুলের।  লেখাপড়া ছেড়ে শুরু করেন বাবার সঙ্গে মাঠের কাজ।
৬১ বছর আগের স্কুলের সেই বকেয়া বেতন এখন পরিশোধ করলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সোহরাব আলী। মঙ্গলবার (৬ জুন) বিদ্যালয়ে গিয়ে সেই বেতন পরিশোধ করেন তিনি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাব আলী বলেন, ‘অভাবের কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দিই। ১৯৬৮ সালে পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরি শুরু করি। প্রশিক্ষণ শেষে যশোর পুলিশলাইনসে কর্মরত থাকার সময় স্বল্প বেতনের কারণে চাকরি ছেড়ে দিন। বাড়ি এসে ব্যবসা শুরু করি। জীবনের শেষ সময়ে এসে স্কুলের সেই বকেয়া বেতনের কথা মনে পড়ে যায়। ঋণী থাকতে চাই না, তাই বেতনের হিসাব করে বর্তমান বাজারমূল্যে ৩০০ টাকা পরিশোধ করেছি।’


বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হাদিকুর রহমানের কাছে বকেয়া বেতন দেন সোহরাব আলী। রসিদ কেটে সেই টাকা গ্রহণ করেছেন বলে  জানান হাদিকুর রহমান।

ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়টি ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। সোহরাব আলী ভর্তি হন ১৯৬২ সালে। সোহরাব আলী যখন বেতন দিতে আসেন, তখন আমি বিদ্যালয়ের কাজে বাইরে ছিলাম। ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করতে আসায় উপস্থিত অন্য শিক্ষকরা খুব খুশি হয়েছেন। জমা রসিদ দিয়ে তার টাকাটা নেয়া হয়েছে। তার এই কাজে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরাও মুগ্ধ।
জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামের সোহরাব আলী ছোটবেলায় পাশের গ্রামে বড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ১৯৬২ সালে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাত্র ছয় মাস ক্লাস করেছিলেন। সেখানে চার মাসের স্কুলের বেতন বকেয়া থাকে তার। এরপর অভাবের কারণে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি সোহরাব আলীর। দীর্ঘ ৬১ বছর পর স্কুলের সেই বেতন পরিশোধ করেছেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন