Daily News BD Online

জীবনের নিরাপত্তা চেয়েও প্রাণ হারালেন বকশিগঞ্জের সাংবাদিক নাদিম‌


ফারুক মিয়া, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি :

তিন মাস আগেও জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হামলার শিকার হয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিজের জীবনের নিরাপত্তা ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচতে পারলেন না। সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ গেল সাংবাদিক নাদিমের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের একটা ভিডিও ক্লিপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী হাসিনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে চাই।’

গত ১১ এপ্রিল বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের লোকজন সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করেছিল। শাহীনার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় এই হামলার শিকার হন নাদিম।

৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া একাধিক মুক্তিযোদ্ধার বয়ানের ভিত্তিতেই শাহীনার বাবাকে রাজাকার উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিক নাদিম।

সেই হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও সমঝোতা করেছিলেন তিনি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে।

এরপর সামনে আসে নির্যাতিত সাবিনা ইয়াসমিনের ঘটনা, যিনি সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী। নির্যাতিত সাবিনার কথা তুলে ধরেন সাংবাদিক নাদিম। তাকে নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ ২০ মে মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন নাদিম। নাদিম ও মুজাহিদ বাবু নামে সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন বাবু।

মেরিট না থাকায় সেই মামলা খারিজ করে দেন ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইবুনালের বিচারক। বুধবার সেই মামলা খারিজ হলে চার ঘণ্টার মধ্যে নাদিমকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হয়।

মুজাহিদ বাবুর বক্তব্যে জানা গেছে, অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থেকে সেই হামলার নেতৃত্ব দেয় চেয়ারম্যান বাবু।

নাদিমের শঙ্কা অমূলক ছিল না, তখন তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে হয়তো এরকম ঘটনা ঘটতো না বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকর।

নাদিমের মৃত্যুর পর তার পরিবারসহ সকল সাংবাদিকদের মধ্যে একটি প্রশ্ন জেগেছে, নিরাপত্তা চেয়েও নিরাপত্তা না পেলে কেউ আর সত্য প্রকাশে সাহস দেখাবেন না।

নাদিমের মৃত্যুর ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, হামলার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলে গ্রেপ্তার হয়নি। সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সদস্য সহ সাংবাদিক সমাজের দাবি, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন