Daily News BD Online

গোপালগঞ্জে জমে উঠেছে নৌকার হাট


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :

গোপালগঞ্জে বর্ষা শুরু হওয়ায় পানি বৃদ্ধি ও কৃষি মৌসুমে নৌকার কদর বেড়েছে। মাছধরা, ধান কাটা, ঘাসকাটা ও সরবরাহ, বাগান থেকে পেয়ারা, শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার কাজে নৌকার বিকল্প নেই। তাই গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নৌকারহাটে নৌকা বিক্রি বেড়েছে। কাশিয়ানির রামদিয়া, মুকসুদপুরের দিগনগর, টুঙ্গিপাড়ার গোপালপুর, সদর উপজেলার সিলনা বাজার, আড়পাড়া হাটে এখন নিয়মিত নৌকার হাট বসে। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে মিস্ত্রিরা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করছেন।  
খাল-বিল, নদী-নালা এলাকার কৃষকদের প্রয়োজনীয় বাহন নৌকা। আর এ নৌকার চাহিদার মেটাতে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। বর্ষা মৌসুম এলেই গোপালগঞ্জের নদী-নালা খালবিল বেষ্টিত এলাকায় নৌকার কদর বেড়ে যায়। এতে নৌকা নির্ভর এলাকাগুলোতে নৌকার চাহিদাও বাড়ে। কৃষি কাজসহ যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে এখনও নৌকার কদর গ্রামীন জনপদে। আর এ বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে জেলার নৌকা তৈরির কারিগররা দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কারিগর আলতাফ মিয়া, সেহরাপ ও ইউসুফ আলী জানান, কাঠ, লোহাসহ নৌকা তৈরির উপকরনের দাম বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি নৌকার দাম। তাছাড়া নিজস্ব পূঁজি না থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে উপকরণ কিনতে হয়। যে কারনে তারা তেমন দাম পায় না। তবুও তারা প্রতি হাটে তৈরি করা নৌকা নিয়ে হজির হয়।
কোটালিপাড়ার ধারাবাশাইল, কালিগঞ্জ এর বৃহত্তম নৌকারহাট ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে সর্গরম হয়ে উঠেছে। দুই শতাধিক বছরের পুরানো নৌকা কেনা বেচার এ হাটে বিক্রির জন্য বিভন্ন স্থান থেকে কারিগর এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে আসে। এখান থেকে এসব নৌকা যাচ্ছে বৃহত্তর বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকায়। প্রতি মৌসুমে এ হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
স্থানীয় নৌকার কারিগররা জানান, কোষা মূলত নৌকার ক্ষুদ্র সংস্করণ। অন্যান্য নৌকার মতো এর গলুইয়ের কাঠ বড় থাকে না। অঞ্চল বিশেষে এর আকারে কমবেশি দেখা যায়। এর আদর্শ দৈর্ঘ্য ৯ মিটার। কখনো কখনো ৬ মিটার দৈর্ঘ্যের কোষাও দেখা যায়। নৌকা বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ৪০টি নৌকা এনেছিলাম । ৪০টিই বিক্রি হয়ে গেছে। এই হাটে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের নৌকাও পাওয়া যায়। কাঠের মান, আকার অনুযায়ী দাম। বাবা-দাদার আমল থেকে এই নৌকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। আগে লাভ ভালো ছিল। কিন্তু এখন কাঠ, নির্মাণসামগ্রী, শ্রমিক মজুরি, মিস্ত্রি মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা লাভ থাকে না। চাম্বল কাঠের নৌকাগুলো দেখতে সুন্দর। নৌকার খোলে পণ্য পরিবহনের জন্য দুটি বাক্স আকারের আলাদা ডেক রয়েছে। মাঝখানটায় পানি জমার জন্য ফাঁকা থাকে। পানি সেচের সুবিধার্থে নৌকাগুলোর এমন ডিজাইন করা হয়েছে। নৌকার হাটের ইজারাদার আবদুর রহিম জানান,প্রতি বছর নৌকার বিক্রির মৌসুমে প্রতি হাটে হাজার-বারো শ’ নৌকা বিক্রি হতো। এখন কিছু কম বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় নৌকার দামও বেশি।
গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্র্রের সাবেক প্রকৌশলী দিলিপ সরকার জানান, নৌকা তৈরির কারিগরদের পূঁজি সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে তাদেরকে বিসিক থেকে স্বল্প সুদে মৌসুমী ঋণ দেয়ার একটি প্রকল্প রয়েছে। তারা ঋণের জন্য এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন