আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষক। মাঠে মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। কৃষকরা সাদা গুটি, লালতীর ও প্রীতম জাতের বেগুন চাষ করেছেন। ফুলবাড়ীর উৎপাদিত বেগুন উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে
রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হয়।
আমন ধান ঘরে তোলার পর উচু জমিতে বোরো চাষের চিন্তা না করে বেগুন চাষ করছেন। বেগুনের জমিতে চাষ ও সার কম দিতে হয়। ফলে খরচ কম পড়ে। বেগুন বিক্রি
করতে কৃষকদের কষ্ট করে হাটবাজারে যেতে হয় না। পাইকারি কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যান। এতে তারা অনেক
বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এছাড়াও এ বছর বেগুনোর দাম চাহিদার চেয়েও বেশি পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা এখন বেগুন চাষের দিকে দিন দিন ঝুঁকছেন।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের বুজরুক সমশেরনগর (পাঠকপাড়া) গ্রামের বেগুন চাষি রুবেল বাবু বলেন, ১৫ শতক জমিতে লালতীর ও প্রীতম জাতের বেগুন চাষ
করছেন। এতে এক হাজার বেগুন গাছের চারা রোপণ করেছেন। প্রাকৃতিক কোনো প্রকার দুর্যোগসহ রোগ-বালাই তেমন না হলে আগামী ৬০ থেকে ৭০দিনের মধ্যেই ঘরে বেগুন তুলতে পারবেন। সার, সেচ ও বীজসহ সব মিলিয়ে তার খরচ হবে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকলে খেতের উৎপাদিত বেগুন থেকে আয় হবে অন্তত ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। তবে গত দু’বছর আগে বেগুন চাষ করেছিলেন, কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। এজন্য মাঝে বেগুন চাষ বন্ধ রেখেছিলেন। এ বছর বেগুনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি আবারও বেগুন চাষে নেমেছেন।
উপজেলার পলীপাড়া গ্রামের বেগুন চাষি প্রদীপ কুমার বলেন, বেগুন চাষে বোরো আবাদের চেয়ে পানি ও সার কম লাগে। শ্রমিকও অনেক কম।
তুলনামূলকভাবে বাজারে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ১২-১৩ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যায় সর্বোচ্চ
১৮ থেকে ২০ মণ। প্রতি মণ ৬০০ টাকা হিসাবে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের তেমন লাভ হয় না। অপরদিকে এক বিঘা
জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২৬-২৮ হাজার টাকা। সেখানে পুরো মৌসুমে প্রায় দেড়শ মণ বেগুন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজার অনুযায়ী, গড়ে
প্রতি মণ বেগুন পাইকারি পর্যায়ে ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি হয়। যার খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ২৩৬ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হচ্ছে। বেগুনের চারা রোপণের ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বেগুন তোলা যায়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে এলাকাভেদে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন। বেগুন চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বেগুন চাষে সেচ খরচ একেবারে নেই বললেই চলে। একদিকে উৎপাদন খরচ কম, অন্যদিকে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা বেগুন চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক বেগুনচাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।