Daily News BD Online

ফুলবাড়ীতে শীত আর ঘনকুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত



আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জেঁকে বসেছে শীত। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। দুপুর ২ টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে ছোটবড় যানবাহন। বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই কুয়াশায় ঢেকে যায় পুরো ফুলবাড়ী উপজেলা জুড়ে। সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ফুলবাড়ী পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশায় কয়েক হাত দূরের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। সকালে ট্রেন, বাস, ট্রাকসহ ছোটবড় সকল যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা যায়।


এদিকে, ঘন কুয়াশাসহ তীব্র শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী পরিবারগুলো। শহরের মোড়ে মোড়ে রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে যাত্রীর আশায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রীর স্বল্পতায় বিপাকে পড়েছেন চালকরা। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ফুলবাড়ী কোচ স্ট্যান্ড গিয়ে দেখা যায়, কুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের যাত্রীবাহী বাস এসে দাঁড়ায়। ওই বাসের যাত্রী মল্লিকা রানী ও সিফাত আহম্মেদ বলেন, ঢাকা থেকে ফুলবাড়ীতে এসেই দেখছি চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। কিছু দেখা যাচ্ছে না। শীতের তীব্রতাও অনেক বেশি।


সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মজনু বলেন, ভোরে সিএনজি নিয়ে স্টেশনে এসেছি। চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢাকা। ১০ হাত দূর থেকেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিনের তুলনায় সড়কে মানুষের যাতায়াত কম।


এদিকে শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে খেতমজুররা জমিতে কাজ করতে পারছেন না। খেতমজুর রহমত আলী বলেন, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। ফাঁকা জায়গা হওয়ায় সেখানে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না বলে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে দিনের পুরো মজুরিও পাচ্ছেন না।


ফুলবাড়ী সরকারি কলজের অনার্স ১ম বর্ষে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাফি সরকার ও স্নিগ্ধা রানী বর্ষা জানান কয়েকদিন থেকেই ঠান্ডা হিমেল হাওয়ার সাথে এমন ঘন কুয়াশার সাথে দেখা মিলছে ফুলবাড়ীতে। কলেজের কিছু কাজ থাকায় ঠান্ডায় ও কলেজে আসতে হয়েছে আমাদের।


দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ৬ টায় দিনাজপুর জেলায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। তবে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের যাতে শীত না লাগে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সানাউল্লাহ বলেন, উপজেলার দুস্থ শীতার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৭০ টি কম্বল এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ ৩ লাখ টাকা দিয়ে আরো ৯১০ টি কম্বল কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কম্বলগুলো উপজেলার এতিমখানাসহ, ছিন্নমূল মানুষ ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।#


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন