বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে বিবাহ বিচ্ছেদ, জানা গেল যেসব পেশায় ডিভোর্সের হার বেশি


নিউজ ডেস্ক : সম্প্রতি এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, কিছু পেশা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ডিভোর্সের হার বাড়ে। পেশাগত কারণে অনেক সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, বিশেষ করে সেসব পেশায় যেখানে অধিক সময় বা মানসিক চাপ থাকে। বিবাহ বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম ও আইন অনুযায়ী ভিন্নভাবে প্রচলিত।

বিশ্বব্যাপী বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত সময়ের অভাবেই বেশিরভাগ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট পেশার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরাই এই পথে হাঁটছেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন পেশাজীবীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সব চেয়ে বেশি:

১) বারটেন্ডাররা: বিবাহ বিচ্ছেদের তালিকায় সব থেকে ওপরে আছেন বারটেন্ডাররা। তারা মূলত বারে পানীয় তৈরি ও পরিবেশন করেন। এই পেশাজীবীদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার সর্বোচ্চ।

২) অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্টরা: বিবাহ বিচ্ছেদের দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন অ্যাডাল্ট পারফরম্যান্স আর্টিস্টরা। পেশাগত কারণে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কে মানসিক চাপ, অনিরাপত্তাবোধ, ঈর্ষা, প্রতারণার মতো বিষয়গুলো অতিমাত্রায় বেশি থাকে।

৩) সামরিক কর্মকর্তারা: তালিকার তৃতীয় অবস্থানে আছে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা। এটি এমন একটি পেশা, যেখানে সব সময় মানসিক চাপে থাকতে হয়। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এই পেশাজীবীদের মানসিক দূরত্ব থাকে। তাদের জীবনসঙ্গীরা একাকিত্ব ও সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ফলে তারা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনের অভাবে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন।

৪) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা: এর পর তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই পেশাজীবীরা সাধারণত প্রথমে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন রোগীদের, জীবনসঙ্গীদের নয়। এই পেশার কারণে তারা খুব কমই সঙ্গী বা পরিবারকে সময় দিতে পারেন। এমনকি তারা অনেক ক্ষেত্রেই সঙ্গীর মানসিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন।

৫) কাস্টমার কেয়ার, টেলিমার্কেটের ও সুইচবোর্ড অপারেটর: এসব পেশাজীবী সব সময় চেয়ারে বসে থাকেন। পুরো সময় ফোনে কথা বলেন। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির ঝাড়ি খান, গালি খান। ঠান্ডা মাথায় মানুষের সমস্যার সমাধানও দিতে হয়। এ কারণে তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। মানসিক চাপ থাকে ভীষণ। ফলে জীবন থেকে সুখ বিষয়টা দূরে চলে যায়। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সম্পর্কে। তাঁদের নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

৬) গেমিং সার্ভিসেস ওয়ার্কার: এই পর্যায়ে রয়েছেন গেমিং সার্ভিসেস ওয়ার্কার। যারা ক্যাসিনোতে কাজ করেন বা জুয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাদের জীবনযাপনের ধরনের কারণেই জীবনসঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মোটরবাইক চালক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং আইটি বিশেষজ্ঞ পেশাতেও ডিভোর্সের ঝুঁকি কিছুটা বেশি, কারণ এই পেশাগুলোর কাজের চাপ, দীর্ঘ সময় বা দূরে থাকার কারণে সম্পর্কের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি হয়।

৭) ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস: ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস অনেকের কাছে খুবই আকর্ষণীয় চাকরি। এই পেশাজীবীরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। বেতন ভাতাও তুলনামূলক ভাবে ভালো। তবে এই পেশাটি বেশ চাপের। ক্রমাগত ভ্রমণের ফলে তারা শারীরিক আর মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন। লম্বা সময় পরিবার থেকে দূরে থাকা ও ‘লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ’ চালিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়।

৮) ব্যালে ডান্সার: বিবাহ বিচ্ছেদের হার ব্যালে ডান্সারদের মধ্যেও সর্বোচ্চ। এই পেশা জীবনে সর্বোচ্চ সফলতার দেখা পাওয়ার জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তাদের ফিটনেস বজায় রাখা খুবই জরুরি। শরীরে ব্যথা, ফ্র্যাকচার, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, হাড় ভাঙা এ রকম নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন তারা। নিজেদের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতা ও অসন্তুষ্টিতে ভোগার হারও তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পেশাজীবীরাই সবচেয়ে বেশি ‘ইটিং ডিজঅর্ডার’ এ ভুগে থাকেন।

৯) ম্যাসাজ থেরাপিস্ট:
জীবনসঙ্গীরা এই পেশাজীবীদের পেশা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগেন।

১০) টেক্সটাইল নিটিং ও ওয়েভিং মেশিন অপারেটর: তারা চাকরিজীবন নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন। এটা তাদের মানসিক চাপ বাড়ায়। এর প্রভাব পড়ে মেজাজ, মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্কে।

আপনি এর পরেরবার যখন তাদের কারও সঙ্গে বিভিন্ন সেবা নিয়ে আপনার বাজে অভিজ্ঞতা ও সমস্যার কথা বলবেন, যথাসম্ভব নরম স্বরে কথা বলুন। মনে রাখবেন, আপনার ভোগান্তি বা অসুবিধার জন্য তারা দায়ী নন। তারা কেবল জীবন চালানোর জন্য চাকরি করছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন