ফরহাদ খান, নড়াইল :
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা গ্রামে কৃষক খাজা মোল্যা (৪২) হত্যাকান্ডের জের ধরে আসামিপক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কুমারডাঙ্গা গ্রামের আইউব শেখের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ববি বলেন, গত ১৪ মে সকালে খাজা মোল্যা হত্যাকান্ডের জের ধরে আমাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে প্রতিপক্ষরা। আগুনে ১০০ মণ পাট ও ৮০ মণ ধানসহ দু’টি আমগাছ পুড়িয়ে গেছে। ঘটনার সাতদিন পরও পুড়ে যাওয়া ধান ও পাট থেকে আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গিয়েও এমনটি দেখা গেছে। অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া কয়েকদফা বৃষ্টিও হয়েছে। তবুও আগুনের ভয়াবহতা থেকে এখনো ধোয়া বের হচ্ছে।
ফারজানা আক্তার ববি আরো বলেন, আমার মেয়ে সায়রা ইসলাম ব্রেণ টিউমারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য ঘরে রাখা পাঁচ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১৩টি গরু লুটপাট করে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষরা। এছাড়া ঘরের আসবাপত্রসহ বাড়ির মালামাল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। বিছানাপত্র, পোশাকসহ কোনো কিছুই ব্যবহার করার মতো নেই। এদিকে, আমার ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আপন শেখকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষরা।
ইতনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ শেখের স্ত্রী সাবিনা ইসলাম বন্যা বলেন, আমার স্বামী সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বাঁধা দেওয়ায় খাজা মোল্যা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমাদের ঘরের টিনের চালা কেটে ফেলায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলে পানি পড়ছে। ঘরের মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুর করায় আমাদের অন্যত্র থাকতে হচ্ছে। বইপত্র লন্ডভন্ড করে ফেলায় এবং প্রতিপক্ষের ভয়ভীতিতে ছেলে-মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। আমরা চাই হত্যাকান্ডের বিচার হোক। কিন্তু আমাদের বাড়িঘরে কেন হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে ?
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, কুমারডাঙ্গা গ্রামের এসকেন্দার শেখের সাথে খাজা মোল্যার ব্যক্তিগত শত্রুতা ও পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ মে সকাল ৬টার দিকে কুমারডাঙ্গা বাজারে চায়ের দোকানের সামনে খাজাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত এক সপ্তাহে আসামিপক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ কারণে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশু-কিশোররাও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দিনের বেলায় নারী ও শিশু-কিশোররা বাড়িতে আসতে পারলেও রাতে ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করায় ঘরবাড়ি যেমন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রতিপক্ষের ভয়ে রাতে বেলায় কেউ বাড়িঘরে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
ক্ষতিগ্রস্থরা আরো জানান, টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-বাঁছুর, হাঁস-মুরগি, ধান-পাটসহ অন্যান্য শস্যাদি লুটপাট করায় এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের ফলে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের।
ইনসান শেখের স্ত্রী বৃদ্ধ মেহেরুন্নেসা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খাজা মোল্যা হত্যার পর বাদীপক্ষের লোকজন আমার ঘরবাড়ি ও মালামাল আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছে। আগুন যখন দাউ দাউ করে জ¦লছিল, তখন ঘরে আটকেপড়া আমার পুত্রবধূ ও তার শিশু ছেলেকে দরজা ভেঙ্গে বের না করলে হয়ত পুড়ে মারা যেত! তিনি আরো বলেন, এছাড়া আমাদের ১২টি মাছের ঘের, ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও টাকা এবং কোরবানির চারটি গরু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বসত ঘর পুড়িয়ে ফেলায় বর্তমানে গোয়াল ঘরে বসবাস করছি।
এছাড়া রওশন শেখ, ইব্রাহিম শেখ, মনিরুল মোল্যা, সাদ্দাম শেখসহ একাধিক ব্যক্তির বাড়ি থেকে গরুসহ অন্যান্য মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষরা। গত মঙ্গলবার (২০ মে) রাতেও শহীদ শেখ, শাহীন শেখ ও মিলন মোল্যার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে জানান ভুক্তভোগীরা।
নিহত খাজা মোল্যার ভাই মামলার বাদী আলী হায়দার মোল্যা দাবি করে বলেন, আমাদের লোকজন আসামিপক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই আজিজুর তালুকদার জানান, এ হত্যাকান্ডের পর গ্রামটিতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ৩৬ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।