আওয়ামী দোসর, সার্ভেয়ার মামুনের কাছে এখনো জিম্মি নারায়ণগঞ্জ এলএ শাখা



নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সার্ভেয়ার মামুন সিন্ডিকেটর কাছে এখনো জিম্মি হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। 

বিশ্বস্ত সূত্র ও সরেজমিনে অনুসন্ধান করে পাওয়া  যায়, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ/এলএ শাখার একাধিক ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির সাথে জরিত, সার্ভেয়ার মামুনের অলৌকিক ক্ষমতা এতোটাই শক্তিশালী যে, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও বীরদর্পে অবৈধ টাকার জোর ও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো  নারায়ণগঞ্জের এলএ শাখায় রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, দূর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মামুন সিন্ডিকেট। 

উল্লেখ্য যে, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলের ২০২১-২০২২ সালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মামুন হোসেন,সড়ক ও জনপদের সার্ভেয়ার মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং মোঃ সোহাগ এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। 

সার্ভেয়ার মামুন এর বিরুদ্ধে এর আগেও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক/পত্র-পত্রিকায় একাধিক বার তার অনিয়ম-দূর্নীতির খবর প্রকাশিত হলেও তার অবৈধ টাকার জোর ও কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি। 

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়,  নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নিত করণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণকৃত ২১/২০২১-২০২২ নং এলএ কেস মুলে ২০২১ সালে তৎকালীন সরকার ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করলে, উল্লেখিত এলএ কেসের ২১/২০২১-২০২২ মামলাটি  ৪(১) ধারা নোটিশ জারি করা হয়।

৪(৭) ধারা মোতাবেক নোটিশ জারির পর উক্ত সার্ভেয়ার মামুন ও তার সিন্ডিকেট অসৎ উপায়ে দূর্নীতি করে অঢেল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সরেজমিনে ভূমির প্রকৃত শ্রেণীর পরিবর্তন করে সেখানকার প্রকৃত ভূমি নাল/কৃষি থাকলেও সেই ভূমিকে স্থাপনা নির্মান ও  বাণিজ্যিক ভূমি দেখিয়ে কোটি কোট টাকা ঘুষ বিনিময়ের মাধ্যমে  তদন্ত করে অধিগ্রহণকৃত ভূমিকে বানিজ্যিক শ্রেণিতে পরিনত করে দেন।  

জান যায় যে, ভূমির এই শ্রেনী পরিবর্তন করে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, সার্ভেয়ার মামুন ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

উক্ত বিষটি নিয়ে, এ,এস,এম, সালেহ আহমেদ, সিনিয়র সচিব, ভূমি মন্ত্রনালয় বরাবর উক্ত দূর্নীতি প্রসঙ্গে একটি আপত্তি প্রেরণ করেন, জনাব মো: একরামুল হক পিতা মৃত আব্দুল কাদির ভূইয়া, উক্ত  আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে  মন্ত্রনালয়ের ডকেট নাম্বর: ৪০৫৫, গত ৯/০৪/২৫ তারিখে ভূমি মন্ত্রনালয়ের ২০৫৪ নং স্মারক মূলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা বিভাগে পত্র দেয়া হয়।

বিভাগীয় কমিশনার প্রাপ্ত  তথ্যের  প্রেক্ষিতে গত ৯/৪/২৫ তারিখে ২০৫৪ স্মারক মূলে এলএ কেস নম্বর ২১/২০২১-২০২২ এর দুর্নীতির বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

কিন্তু গত মার্চ মাসে এই দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হলেও সার্ভেয়ার মামুনের অবৈধ টাকা ও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো পর্যন্ত ঐ তদন্তের প্রতিবেদন ভূমিমন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়নি।

ইতি মধ্যেই জানা গেছে, গত জুন মাসের শেষের দিকে এই দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং 
উক্ত তদন্তের প্রতিবেদনে খাদুন মৌজা - ৯২, মালিক সিটি গ্রুপ, খাদুন মৌজা - ৯৫, মালিক সিটি গ্রুপ, খাদুন মৌজা - ৪৩২, মালিক  মাহাবু আলম তারু, বরপা মৌজা - ৭৭৩, মালিক হাজী মোখলেছুর রহমান, আড়িয়াব মৌজা - ১০৫, মালিক  মোঃ মজিবুর ভূইয়া, আড়িয়াব  মৌজা - ১৯৬, মালিক লক্ষি রানী, আধুরিয়া মৌজা - ৮২৭, মালিক মফিজুল ইসলাম, আধুরিয়া মৌজা - ৮৩১, মালিক মিলন মিয়া, মাহনা মৌজা - ৮৯, মালিক রুবিনা বেগম, কেশরাব মৌজা - ১১৬২, মলিক বারেক মিয়া সহ আরোও প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি দাগের নাল/কৃষি ভূমিকে প্রকৃত শ্রেনী পরিবর্তন ও বানিজ্যিক শ্রেণীতে পরিনত করেছেন।

বিশ্বস্তসূত্রে আরোও জানা যায়, সরেজমিনে তদন্ত কমিটির প্রাপ্ত তথ্য মতে কিছু কিছু ভূমির বাস্তব শ্রেণী নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি অসংগতিও রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় সার্ভেয়ার মামুনের এসব দুর্নীতির কথা জানার পর তাকে সাথে সাথে বন্দর উপজেলা ভূমি অফিসে বদলি করলেও তার বিশ্বস্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ/ভূমি অধিগ্রহণ শাখা।

এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলার আওতাধীন সকল ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে গভীর  ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাদের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্টের পরে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে  দেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর এমনকি সব জায়গাতেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও কেনো বা কি কারণে, কোন অদৃশ্য ক্ষমতার ভয়ে এখনো এই সার্ভেয়ার মামুনের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থাই গ্রহন করা হয়নি।

এতো বড় দুর্নীতি করার পরও সীমাহীন দাপটের সাথে কিভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে চাকরি করে এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সার্ভেয়া মামুন।

উল্লেখ যে জুলাই আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে, ছাত্রজনতার ভূমিকা ছিলো অপরিসীম,যে ভূমিকা সারাজীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবে দেশ ও জাতির কাছে।

সুতরাং নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিস্ট দোসরদের কোনোভাবেই মেনে নেবেনা নারায়ণগঞ্জ বাসী।

এতোসব দুর্নীতি করার পর সার্ভেয়ার মামুনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও দুদকে মামলা হওয়ার কথা থাকলেও সবাইকে টাকা দিয়ে সব কিনে রেখেছে সার্ভেয়ার মামুন। 

জানা গেছে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেছিল শামীম উসমানের ক্ষমতায় ২০১৯ সালে। 

দীর্ঘ ৬ বছর পরে বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মের কারণে গত ৭/৭/২৫ তারিখের জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় থেকে উপজেলা ভূমি অফিস বন্দরে তাকে বদলি করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন