মোঃ লুৎফর রহমান (খাজা শাহ্) :
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দলের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে অনেককে ফোন করে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ফলে সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক হয়ে যাওয়ায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা এখন বেশ উজ্জীবিত। অন্যদিকে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে বাকি ২টি আসনের একটিতে এলডিপি এবং অপরটিতে এনসিপিকে ছাড় দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এই আভাসের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশনাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৯টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফোন করে তাদের মোবাইল ফোন ফ্রি রাখতে বলেন। সেই সঙ্গে কোনো জনসমাগমে না থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা-ই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রার্থী। সেদিন রাতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না, এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সবুজ সংকেত পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। নতুন করে কর্মসূচি নির্ধারণ করে মাঠে নেমে পড়েছেন। অন্যদিকে ফোন না পাওয়া বা সংকেত না পাওয়া নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
৯টি নির্বাচনী আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- কুমিল্লা-১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, কুমিল্লা-৩ আসনে সাবেক ধর্ম মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, কুমিল্লা-৫ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা-৮ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা-৯ আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রিীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, কুমিল্লা-১০ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূইয়া এবং কুমিল্লা-১১ আসনে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা।
এছাড়া কুমিল্লার ২টি আসনে শরিক দলকে ছাড় দেওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ দুটি আসনের মধ্যে কুমিল্লা-৪ আসনে এনসিপির বিভাগীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসানাত আবদুল্লাহ ও কুমিল্লা-৭ আসনে এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদের প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।
এসব প্রার্থী চূড়ান্তের খবর বাতাসে চাউর হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে দেখা করে নাঙ্গলকোট আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর দুয়েকদিন আগে মনিরুল হক চৌধুরীর সাথে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা কি বিষয়ে কথা বলেছেন তা এ রিপোর্ট লিখার সময় পর্যন্ত জানা যায়নি।
অপরদিকে রবিবার ভোরে কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রহমান রাজিব তার ফেসবুক প্রোফাইলে ১১টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের উৎফুল্ল দেখা গেছে। তাদের নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত। প্রার্থীদের পাশে নেতাকর্মীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। যদিও একদিন পর রাজিব তার ফেসসবুক পোস্টটি ডিলিট করে দাবী করেন- তার আইডি হ্যাক হয়েছিলো।
জানতে চাইলে কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূইয়া বলেন, দলীয় হাই কমান্ড থেকে আমাদেরকে মাঠে কাজ করে যেতে বলা হয়েছে সে অনুযায়ী আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। যতদূর জানতে পেরেছি- সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আমাদেরকে ফোন করা হবে।
কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের প্রথম এবং প্রধান শর্ত “যারা বিগত আন্দোলনে-সংগ্রামে মাঠে ছিলো, নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলো এবং কোনোরকম অন্যায়ের সাথে জড়িত নয় তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই ক্যাটাগরিতে আমি একনম্বরে আছি। আমার বিশ্বাস কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন আমিই পাবো, ইনশাল্লাহ”। উল্লেখিত ৯টি নির্বাচনী আসনে এখন নেতাকর্মীদের নির্বাচনী তৎপরতা জমজমাট রূপ ধারন করেছে।