মৌসুমী কুন্ডু থেকে মিতু দাস হয়ে আদিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি!
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
১০ই জুলাই ২০২৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামের আদিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে মৌসুমী কুন্ডু মিতু দাস হয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ পাওয়ার পর এক বছর ধরে বেতনও তুলেছেন তিনি। বেশ ভালই চলছিল। ই এফ টি চালু হওয়ার পরে বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে বিপাকে পড়েছে মৌসুমী কুন্ডু পরিবর্তিত নাম মিতু দাস। তবে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে যে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানের ছেলের স্ত্রী অবৈধ পন্থায় ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে মিতু দাস নামে নিয়োগ দিয়েছে।
এই বেতন ভাতা বন্ধ হওয়ার পর মিতূ দাসের বিভিন্ন লম্প ঝম্প সহ নির্বাচন অফিসে ঘুরাঘুরির মাধ্যম দিয়ে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে প্রচুর টাকার কারণে মিতু দাসের প্রয়োজন হয়নি আইডি কার্ডের কপি।
এলাকাবাসীর বক্তব্য মিতূ দাসের অরজিনাল নাম মৌসুমী কুন্ডু। এই মৌসুমী কুন্ডু নামেই সে নবোদয় বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করে। এই এসএসসি পাশের সনদে তার জন্ম তারিখ ১৯৮৩ সাল। এই সনদ মোতাবেক তৈরি হয়েছে তার এন আই ডি কার্ড। পরে নাম পরিবর্তন করে মিতু দাস নাম দিয়ে শৈলকুপা বি এল কে বাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২০ সালে আবার পুনরায় এসএসসি সমমান পাস করে। এখানে সে ভিন্ন জন্মতারিখ ব্যবহার করছে ১৯৯২ সাল। ২০২০ সালে ভিন্ন নামে এসএসসি পাস করলেও তার এনআইডি কার্ড মৌসুমী কুণ্ড নামেই থেকে যায়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে এনআইডি কার্ড ভাবেই ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ দান করে এবং সে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন উত্তোলন করতে থাকে।
ইএফটি পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে তার বেতন বন্ধ হয়ে গেলে সে নির্বাচন কমিশনারের কাছে তার এনআইডি কার্ড পরিবর্তনের জন্য দরখাস্ত করেছে।
এই প্রসঙ্গে মৌসুমী কুন্ডু পরে পরিবর্তিত নাম মিতু দাসের সাথে কথা বললে সে বলে যে আমি প্রথম মালিথিয়া নবোদয় বালিকা বিদ্যালয় হতে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করি পরে চাকরির নিশ্চয়তা পেয়ে ২০২০ সালে আমি শৈলকুপা বি এল কে বাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সমমান সার্টিফিকেট অর্জন করি। তবে দুইটা সার্টিফিকেটে তার জন্ম তারিখ ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে বলে সে স্বীকার করে। এই সময় নিয়োগ কমিটি তার নিকট এনআইডি কার্ডের কপি চাইনি।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় যে মৌসুমী কুন্ডু নামের এনআইডি কার্ড মিতু দাস নামে পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে দুইটি পাশের সনদ জমা দিয়েছেন। সেতার আবেদনের শ্বীকার করে যে মৌসুমী কুন্ডু এবং মিতু দাস দুইজন একই ব্যক্তি। আমি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করি মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার এনআইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ও নাম পরিবর্তনের আবেদন করছি। যেহেতু সে একই ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বিষয়টি সেইভাবে দেখবেন বলে তিনি মনে করেন। সে আরো বলেন দুটো সনদপত্রের কপি দিয়েই আমি তার দরখাস্ত উপরে পাঠিয়েছি। ঝিনাইদহ জেলা অতিরক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন এর সাথে কথা বললেও সে বলে যে নির্বাচন কমিশনার তার বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখবে এবং তার এনআইডি কার্ড পরিবর্তন হওয়া সম্ভব যেহেতু সে একই ব্যক্তি। যেহেতু তার দুই সনদে দুই নাম এবং দুই জন্ম তারিখ রয়েছে এই প্রসঙ্গে কি করবেন সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তাদের দুজনের কেউ দিতে পারেননি।
মৌসুমী কুন্ডুর এক ছেলে আদিল উদ্দিন কলেজে বর্তমান প্রশ্ন করছেন। নির্বাচন কমিশনার মৌসুমী কুন্ডুর ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটা এখন দেখার বিষয়। তবে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে যে নির্বাচন কমিশনারের উপর মহলকে মৌসুমী কুন্ডু অনেক টাকা দিয়ে কন্ট্রোল করেছে যার কারণে তার ভোটার আইডি কার্ডের নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।
এই ব্যাপারে জানতে আদিল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ রোকুনুজ্জামানের সাথে কথা বললে সে বলে যে যখন নিয়োগ দিয়েছিলাম তখন যিনি সভাপতি ছিল তার উপরে আমার কথা বলা সম্ভব হয়নি। আমি ছিলাম কাঠের পুতুল আমাকে যেভাবে ইচ্ছা সেই ভাবেই তার কথা শুনতে হয়েছে কারণ তারা ছিল আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা । যার কারণে আমার উপায় ছিল না আমি নিয়োগের সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছি। তবে তাকে বলে দিয়েছি যদি সে এনআইডি কার্ডে তার নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে তাকে আমরা চাকরি থেকে সরিয়ে দেব। আমরাও জানতে পেরেছি তার দুইটা সনদপত্রের বয়স ও নাম ভিন্ন ভিন্ন।
এলাকাবাসী মনে করেন এনআইডি কার্ড ভিন্ন একটা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে নিয়োগ হয়? নিয়োগ যদি অবৈধ হয় তাহলে কেন তার নিয়োগ বাতিল হবে না? এন আই ডি কার্ড ছাড়া তার নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না? এই নিয়োগের টাকা ভাগাভাগির সাথে অধ্যক্ষ জড়িত আছে বলে সকলে ধারনা করছে। প্রশ্নের জট খুলবে নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্তের উপর। সাধারণ মানুষ একটা এনআইডি কার্ড পরিবর্তন করার জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে তাকে দুনিয়ার কাগজপত্র জমা দিতে হয় আর এর ক্ষেত্রে আইন ভিন্ন।
Tags
ঝিনাইদহ
