মারুফ আহমেদ, টঙ্গী (গাজীপুর) :
আমার বাবা শখ কইরা নতুন হোন্ডা কিনছে, আমার বাবার হোন্ডা দিয়া আমার বাবারে নিয়া ওরা মাইরা লাইছে ! আমার বাবার লগে তো কারো কোন ঝগড়াঝাটি ছিল না ওগো লগে ও তো কোন ঝামেলা ছিলো না তাহলে কিল্লাইগা ওরা আমার বাবা রে এমন কইরা মারলো..??
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভাবেই আহাজারি করে কাঁদছিলেন নিহত রিফাতের মা আনোয়ারা বেগম। গত ৮ বছর আগে ১১ বছরের শরিফ হোসেন রিফাত কে রেখে ভাগ্য বদলের জন্য পাড়ি জমান জর্ডানে। মাস কয়েক আগে ছেলের সাথে কথোপকথনের সময় আনোয়ার বেগম দেশে ফিরেই রিফাতের বিয়ের আয়োজন করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন নিহত রিফাত কে । তবে সেই আশা আশা ই রয়ে গেল।
নিহত রিফাতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী সোহাগ ও কাজলের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে বাসা থেকে বের হন তাঁরা। এরপর আর বাসায় ফেরেননি রিফাত। মঙ্গলবার সকালে গাছা থানার পলাশোনা এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে নিহত রিফাতের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। পরে খোঁজাখুঁজি করে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন বিরুলিয়া এলাকার তুরাগ নদ থেকে নিহত রিফাতের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে গাছা থানায় এরশাদনগর ২ নং ব্লকের বাসিন্দা খোকা মিয়ার ছেলে সোহাগ (৩৫) ও একই এলাকার আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে তাইজুল ওরফে কাজল (৩২) কে আসামি করে হত্যার মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা ফারুক হোসেন।
নিহত রিফাত গায়ে ছোট কাটার দাগ ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানান গাছা থানার উপপরিদর্শক পাপন হাসান।
এদিকে, বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী এরশাদনগর এলাকায় জড়ো হন রিফাতের পরিবার ও এলাকার লোকজন। প্রথমে এরশানগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। এর একপর্যায়ে মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তাঁরা। এতে ঢাকামুখী সড়কে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে টঙ্গী পূর্ব থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নিহত রিফাতের মা বলেন, আমার ছেলে হুন্ডা(মোটরসাইক) পাঠাও চালাইতো। অনেক শখ কইরা এই হুন্ডাটা কিনছে। আমার পোলা কখনো কারো লগে কোন ঝগড়াঝাটি মারামারিতে করতো না । ২৫ তারিখ রাইতে ওর বাবা যখন অসুস্থ হইলে তখনও কাজল সোহাগ রিফাতের লগে থাইকা ওর বাবারে মেডিকেল নিয়ে গেছে। আমার পোলায় যখন আমারে ফোন দিয়ে ওর বাবার অসুস্থতার কথা কইলো তহন আমি জিগাইছিলাম তোমার লগে কে কে আছে ? তহন এই দুইজনের নাম আমারে কইছে। আমি যদি জানতাম যে ওরা আমার বাবারে মাইরা লাইব আমি তখনই আমার বাবারে ওগো লগে চলতে মানা করতাম।
রিফাতের বাবা ফারুক মিয়া বলেন,সোহাগ ও কাজল আমার ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকেই তাঁরা পলাতক। ঘটনার তিন দিন পরও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। আমরা এই ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গাছা থানার ওসি মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, পুরো ঘটনাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি আমরাও ছায়া তদন্ত করছি। আশা করছি, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা দ্রুতই ধরা পড়বে।
Tags
বাংলাদেশ