Daily News BD Online

রামগতিতে কেনা সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে নারায়ন সাহার বিরুদ্ধে


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের সাহাপাড়ায় অমর কৃষ্ণ সাহা পিতা নগেশ্বর চন্দ্র সাহার ক্রয় কৃত সম্পত্তিতে নারায়ণ চন্দ্র সাহা, পিতা ব্রজেন্দ্রকুমার সাহার জবরদখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। অমর কৃষ্ণ সাহা একজন অসহায় দরিদ্র ব্যক্তি। তার পৈত্রিক বাড়ি রামগতি উপজেলার বিবিরহাট বাজারের চর রমিজ  ইউনিয়নে। একসময় নদীয়ে ভাঙতে ভাঙতে অসহায় হয়ে পড়েন অমর কৃষ্ণ সাহার পিতা নগেশ্বর চন্দ্র সাহা। চর রমিজ  ইউনিয়নের মতিলালের বাড়িতে কোনরকম একটু মাথা গুজার ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি । অমর কৃষ্ণ সাহার ছোট্ট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে রামগতি বাজারে। এই ছোট্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কোনরকম  বাবা-মা স্ত্রী সন্তানকে  নিয়ে চলে যায়৷ অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির এই ছেলেটি এলাকার কিছু ভূমি খোর সিন্ডিকেটের জালে পড়ে গেছেন। রামগতির সাহা পাড়াতে অমর কৃষ্ণ সাহার মামার বাড়ি। মামার বাড়ির সুরেশ সাহা  সপরিবারে ভারত চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলে তার ক্রয় কৃত সম্পত্তি এবং পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির বিভিন্ন লোকজনকে তার সম্পত্তি কেনার জন্য বললেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে  কেউ কিনতে রাজি হননি। পরিশেষে স্থানীয় একজন সালিশদার চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি বাবুল মিয়ার মাধ্যমে  নিজের আপন ভাই নারায়ণ সাহা কে জিজ্ঞেস করা হয় । ভাই নারায়ণ সাহা সরাসরি বলে তার কাছে টাকা না থাকার কারণে সে সেই জমি কিনতে পারবে না।এমন পরিস্থিতিতে ২০২২ সালে সুরেশ সাহা তার ভগ্নিপতি নগেশ্বর রায় ও  ভাগিনা অমর কৃষ্ণ সাহার কাছে দানপত্র দলিল হিসেবে ক্রয় করে। দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে সুরেশ চন্দ্র সাহা বলেছেন আমার দানপত্র দলিলের ১ নং গ্রহীতা  আমার চাচাতো বোনের জামাই এবং ২ নং গ্রহীতা আমার ভাগিনা হয়। তোমরা দীর্ঘদিন থেকে আমার পারিবারিক কাজে আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার কারণে আমার সম্পত্তি তোমাদের  দানপত্র করে দিয়ে গেলাম এবং আমি আমার সর্ব স্বত্বের সম্পূর্ণরূপে নিঃশর্তবান হইলাম। আজ থেকে তোমরা আমার এই সম্পত্তির সম্পূর্ণরুপে ভোগ দখল ক্রমে সবকিছু ঠিক রেখে তোমাদের দখল তোমরা বুঝিয়া নিতে পারো। এর ব্যতিরেকে আমার কোন অলি ওয়ারিশগন এই জমির উপর কোন প্রকার ওজর আপত্তি করলে তাহা সর্ব আদালতে অগ্রাহ্য হবে। এমন পরিস্থিতিতে সুরেশ চন্দ্র সাহা ভারতে চলে যাওয়ার পর তার ওই সম্পত্তি এবং ঘর দখল করেন ক্রেতা অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহা। কিন্তু অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহার এই  সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টা করছে সুরেশ চন্দ্র সাহার ভাই নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বারবার অমরকৃষ্ণ সাহা এবং নগেশ্বর চন্দ্র  সাহাকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা। সুরেশ চন্দ্র সাহা ভারতে চলে যাওয়ার পর অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহা তাদের ক্রয় কৃত  সম্পত্তি দখলে নিলে নারায়ণ সাহা কোর্টে একটি হয়রানী মূলক মামলা দেয় । যাহা প্রথম শুনানিতে  খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে চর গাজী ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পুরো জমিন বন্টনের জন্য তারিখ করা হয়। যেখানে কথা ছিল অমর কৃষ্ণ সাহা এবং নগেশ্বর চন্দ্র সাহার জমিন বুঝিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও স্থানীয়  কিছু লোকের সম্পত্তি জবরদখল করে ভোগ দখল করার অভিযোগ উঠেছে নারায়ন চন্দ্র  সাহার বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখে  বন্টন করার জন্য স্থানীয় বাবুল মিয়া নামে একজন শালীশদারের মাধ্যমে বন্টন করে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষ কারণে বন্টনের তারিখটি পিছিয়ে গেলে  নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাবুল মিয়ার সাথে নিজে তারিখ ঠিক করেন। বন্টনের তারিখ আসতে না আসতে নারায়ণ চন্দ্রসাহা কোর্টে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সালিশ মানেনা মর্মে একটি নোটিশ পাঠান । এতে করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নাগেশ্বর চন্দ্র সাহা এবং অমর চন্দ্র সাহা। বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেননি স্থানীয় শালিশদার এবং জনপ্রতিনিধিরা। কারণ গ্রাম্য সালিশ কে ডিঙিয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে অবমাননা করে কোর্টে কেন অভিযোগ দেয়া হলো এটা কারো বোধগম্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এবং  প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছেন অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহা। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে নারায়ণ চন্দ্র সাহা অতীত থেকে এলাকাতে জায়গা জমিন সংক্রান্ত বিষয়ে শুধু বিভিন্ন ঝামেলা লাগিয়ে রাখেন। এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জমিন জবর দখল করে রাখেন। কোন সাধারণ অসহায় মানুষ তার সাথে কথা বললে সে শুধু মামলা হামলার ভয় দেখান । স্থানীয়  একাধিক মানুষ বলেন নারায়ণ চন্দ্র সাহা আগে থেকেই মামলা বাজ একজন লোক। আর এই নারায়ন সাহা কে  সহযোগিতা করছেন,  স্থানীয় বিপুল চন্দ্র সাহা ও খোকন চন্দ্র সাহা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন বিপুল চন্দ্র সাহা ও খোকন চন্দ্র সাহা দীর্ঘ সময় থেকে এলাকাতে বিভিন্ন রকম ঝামেলা শুধু লাগিয়েই রাখেন। ছোট্ট একটি বিষয়কে তারা অনেক বড় করে এলাকার মানুষকে হয়রানি করতে থাকেন। মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ লাগিয়ে রাখেন। এর কারণ এই বিভেদ লাগিয়ে রাখলে তারা তাদের কাছে যাবে তাদেরকে ভয় পাবে। সমাধানের জন্য তাদের কাছে গেলে তারা কোন টাকা ছাড়া সমাধান দেন না বলেও অভিযোগ ওঠেছে । এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের কুচক্রীদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবি। স্থানীয় সালিশদার চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি  বাবুল মিয়া বলেন, অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহা সুরেশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে জমিনটি ক্রয় করেছেন। তারা তাদের জমিন দখল করে আছেন । নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাধা দেয়ায় বন্টনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু নারায়ণ চন্দ্র সাহা বন্টনের তারিখের আগেই ইউনিয়ন পরিষদের বন্টন মানে না মর্মে কোট থেকে একটি নোটিশ পাঠায়। এতে করে নারায়ণ চন্দ্র সাহা সামাজিক এবং ইউনিয়ন পরিষদকে অবমাননা করেছে। বাড়ির অন্যান্য পরিবারের লোকজন বলেন ঘরসঅ জমিনটি ওমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহা, সুরেশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে দানপত্র হিসেবে ক্রয় করেছেন।  সুরেশ চন্দ্র সাহা ভারতে চলে যাওয়ার পর  অমর কৃষ্ণ সাহা নগেশ্বর চন্দ্র সাহার ঘর সহ জমিটি দখলে নিন। তারা সুন্দরভাবে বসবাস করছেন। বিষয়টি নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র সাহার সাথে কথা বললে তিনি অমর কৃষ্ণ সাহা ও নগেশ্বর চন্দ্র সাহার সম্পত্তি  কেনার কথা স্বীকার করেন।  তবে তার ভাই সুরেশ সম্পত্তি তার কাছে কেন বিক্রি করেনাই তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা করছেন । বর্তমানে তিনি অমরের পুরো সম্পত্তি  নিয়ে যেতে চান। এই বিষয়ে জানতে সম্পত্তির মালিক সুরেশ চন্দ্র সাহা কে ফোন দিলে তিনি সুদূর ভারত থেকে ভিডিও বার্তায় বলেন আমি আমার ভাই নারায়ণ চন্দ্র সাহার নির্যাতনের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছি। আমার সম্পত্তি আমি বাড়ির লোকজনের কাছে বিক্রি করার জন্য বলেছি কিন্তু সবাই অপারকতা প্রকাশ করেছে। এমনকি আমার ভাই নারায়ণ চন্দ্র সাহা কে আমি স্থানীয় বাবুল মিয়ার মাধ্যমে জিজ্ঞেস করিলে আমার ভাই নারায়ণ চন্দ্র সাহা টাকা নাই বলে এড়িয়ে যান। তাই আমি বাধ্য হয়ে নগেশ্বর চন্দ্র সাহা ও অমর কৃষ্ণ সাহার কাছে দানপত্র দলিল করে দেই। সকল কিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন নাগেশ্বর চন্দ্র সাহা এবং অমর কৃষ্ণ সাহাকে হয়রানি করা হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে স্থানীয়দের প্রশ্ন। এমনকি এই জমি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি আবেদনে চেয়ারম্যান কে বলে দিয়েছেন সমাধান করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেন নারায়ণ চন্দ্র সাহা সমাধানে বসেন না? কেনই বা বিপুল চন্দ্র সাহা এবং খোকন চন্দ্র সাহা বিষয়টিকে শুধু জিলাপির প্যাঁচের মত প্যাঁচাচ্ছেন প্রশাসনকে  বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন