Daily News BD Online

চাকুরি প্রত্যাশিদের আটকে মুক্তিপণ দাবী "গ্রেফতার-১৪ উদ্ধার-২৭

 


গাজীপুর থেকে ফাহিম ফরহাদঃ

অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসে (কার্যালয়ে) আটকে রেখে শারীরিক ও পাশবিকভাবে নির্যাতন করে বিপুল অংকের মুক্তিপণ দাবির সাথে জড়িত প্রতারক চক্রের ৪ নারী সদস্য-সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১ গাজীপুরের সদস্যরা। একই সময় ২৭জন চাকুরি প্রত্যাশী ভূক্তভূগীকেও উদ্ধার করে র‍্যাব।

গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দেখে সাকিব হোসেন ও তার পূর্ব পরিচিত ফারজানা আক্তার পাখি উভয়েই চাকুরীর প্রত্যাশায় আসেন বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি লি: কম্পানীতে।

আসার পর কোম্পানীর লোকেরা তাদেরকে আটকে রেখে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে সেইসাথে ভিকটিমের পরিবারের নিকট ফোন দিয়ে মুক্তিপন বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। টের পেয়ে এ বিষয়ে ওই দিন-ই ভূক্তভূগী সাকিবের বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য র‌্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুরের সদস্যরা ওই প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২০ মার্চ) পৌনে ১টার (১২:৫০) দিকে র‌্যাব-১ এর সিপিএসসি গাজীপুর এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল গাজীপুর জেলার সিটি-কর্পোরেশনের আওতাধীন গাছা থানা এলাকার হারিকেন রোড রশিদ মার্কেটে কম্পানির অস্থায়ী কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে, এসময় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৪নারী-সহ ১৪জন সক্রিয় সদস্যকে হাতেনাতে কম্পানির ভারা বাসার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামীরা হলো নীলফামারী জলঢাকার শফিকুলের ছেলে আস্তাকুল (৩০), একই জেলা সদরের শফিকুলের ছেলে তৌফিক (২৪), রাজশাহীর বাঘমারার রনিছারের ছেলে ইমরান হোসেন (১৯), নাটোরের সিংড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে জুনায়েদ (২১), ময়মনসিংহের ভালুকার রমজান আলীর ছেলে রনি আহমেদ (২১), একই এলাকার হালিমুদ্দিনের ছেলে সালাউদ্দিন সরকার (২০), পাবনার ঈশ্বরদীর ছানোয়ার হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (২১), কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের চানরায়ের ছেলে রায়হান(১৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদের ছেলে আতিক হাসান (১৯), ময়মনসিংহ সদরের রফিকুলের ছেলে আজিজুল হাকিম (২৩)।

চক্রের নারী গ্রেফতারকৃত সদস্যরা হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরের শাহজাহানের মেয়ে সম্পা আক্তার (২৪), শেরপুর সদরের সারোয়ারের মেয়ে বিউটি খাতুন, যশোহরের কোতয়ালীর আকতারুজ্জামানের মেয়ে বর্ষা খাতুন (১৯), ও বরিশাল সদরের জহিরুল ইসলামের মেয়ে তাহসিন আক্তার মীম (২০)।

এসময় ভূক্তভূগী সাকিব ও ফারজানা ছাড়াও আরো ২৫ জন-সহ সর্বমোট ২৭ জন চাকুরি প্রত্যাশীদের উদ্ধার করে র‍্যাবের আভিযানিক দলের সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক তথ্য প্রদান করে র‍্যাবের নিকট।

জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পারে তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন যাবৎ এই চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় বেতনে বিভিন্ন পদপদবীতে চাকুরির প্রলোভন দেখায়। এছারাও তাদের ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকুরীর চটকদার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকুরি প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের (তরুণ তরুণীদের) সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চক্রটি প্রায় ০৩ মাস যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে চাকুরি প্রত্যাশী তরুণ তরুণীদের সাথে।

এ ঘটনায় প্রতারকদের গ্রেফতারের পর বুধবার রাতেই ঘটনাস্থলে র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈনের আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রীফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয় গণমাধ্যমকে, এছারাও অপর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাবের মিডিয়া সহকারি পরিচালক ও সহকারি পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান সাক্ষরিত এক বার্তা বিজ্ঞপ্তিতেও এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয় সাংবাদিকদের।

তিনি আরও জানান চক্রটির মোট সদস্য সংখ্যা ২০ জন এবং চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ০৫ জন। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকুরী প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এই চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), মোঃ তৌফিক (২৪), মোঃ ইমরান হোসেন (১৯) মোঃ জুনায়েদ (২১) মোঃ রনি আহমেদ (২১) এর নিকট নিয়ে আসত।

এর ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত ১৪ জন চাকুরী প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এমনকি আটক করে রেখে তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিপুল অংকের নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দেয়ার নামে অসংখ্য ব্যক্তির নিকট হতে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও চক্রটির স্থায়ীভাবে কোন অফিস (কার্যালয়) না থাকায় গাজীপুরের গাছা থানার হারিকেন রোডের রশিদ মার্কেটের ভাড়া বাসাকে তারা অস্থায়ী অফিস হিসেবে সু-কৌশলে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব আরও জানতে পারে ভিকটিম সাকিব ও ফারজানা আক্তার ওই কোম্পানীতে চাকুরীর জন্য আসলে, কম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের উভয়কে প্রথমে আটকে রেখে গাজীপুরের একটি অজ্ঞাত বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং উভয় ভিকটিমের পরিবারের নিকট ফোন করে ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সাকিবকে লোহার পাইপ হাতুরিসহ নানা দেশিয় সরঞ্জাম (অস্ত্রাঘাত) দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এসকল অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার প্রমান পাওয়ায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন জানায় র‍্যাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন