Daily News BD Online

ঐতিহ্যবাহী রামচন্দ্রপুর বাজারে জমে উঠেছে শতবর্ষী কোষা নৌকার হাট


মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদনগর : 

চলছে বর্ষার মৌসুম। ভারী বর্ষণ। নদ নদীতে থই থই পানি। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ঐতিহ্য রামচন্দ্রপুর বাজারে শত বছরের পুরানো নৌকার হাটে কোষা নৌকা উৎসবের আমেজে ক্রেতা বিক্রেতার ধুম পড়েছে। এদেশের জনপদ রাস্তা-ঘাট ব্রিজ কালভার্ট তৈরী হওয়ায় ডিঙি, ডোঙা, সাম্পান, বজরা, গয়না, বাইচের, বাতনাই, বাচারি, ময়ূরপঙ্খী, বালার, পানসী, পাতম, একমালাই, মলার, ইলশা ও সওদাগরী নৌকা বড় বড় পন্যবাহী নৌকার বিলপ্ত ঘটলেও শতবর্ষী রামচন্দ্রাপুর হাটে কোষা নৌকার হাট এখনও টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। এই হাটে নারায়নগঞ্জ জেলা আড়াই হাজার, নরসংদী জেলা মাদবদী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা কসবা, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কুমিল্লা জেলা হোমনা, তিতাস,বাঙ্গরা ও মুরাদনগর উপজেলা শত শত মানুষ নৌকা কিনতে ও বিক্রি করতে আসছে। মুরাদনগর উপজেলা ২২টি ইউনিয়ন ৩০৮টি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৭১টি তিতাস নদী, গোমতী নদী, আরচি নদী, বুড়ি নদী,অদের খাল, নিমাইজুড়ি খাল, বিল, হাওড় বাওরে প্রতিটি জনপদে বাড়ছে পানি। কদর বেড়েছে ছোট ছোট নৌকার।

সরজমিনে রামচন্দ্রপুর নৌকার হাট গিয়ে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটে রামচন্দ্রপুর বাজার বাস স্টার্মিনাল ও কাচারি বাজারে এলাকাজুড়ে নানা ঢংয়ের ছোট ছোট নৌকা। পুরো এলাকা দৃষ্টিনন্দন করেছে সারিবদ্ধভাবে রাখা শত শত  কোষা নৌকা। ক্রেতাদের ভিড়ে জমে ওঠেছে হাট। এখানে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেনি পেশার মানুষের জন্য পাওয়া যাচ্ছে নানা মাপের নৌকা। কাঠ মিস্তিররা এমনিতে নৌকা প্রস্তুতি করে রাখে। ভাটি অঞ্চলের মানুষ রামচন্দ্রপুর বাজার ও ডুমুরিয়া বাজার হাট থেকে নৌকা কিনেন।

কৈজুরি গ্রামের নৌকার কারিগর রামপ্রসাদ সরকার ও বিক্রেতা বিমল সরকার বলেন, প্রতি সপ্তাহে প্রতি কারিগর ১০ থেকে ১২টি নৌকা তৈরি করে হাটে নিয়ে আসি। বর্তমানে কাঠ লোহা ও অন্যান্য সাঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। আমরা জামরুল, রেইনটি, আম,কদম ও শিমুল কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করি। 

নৌকা কিনতে এসেছেন নবীনগর উপজেলা রতনপুর ইউনিয়নের বাজে বিশাড়া গ্রামের মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, আমার মাছের প্রজেক্ট আছে। আমাদের গ্রামটি ছোট। খুবই নিচু এলাকা। সামান্য বর্ষাতে রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা।

নৌকা ঘাটের ইজারাদার মুশিদ মিয়া বলেন, এখানে নামে মাত্র নৌকার টেক্স নেওয়া হয়। এসবের মধ্যে হাতে বাওয়া নৌকা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ছোট নৌকা ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা,মাঝারি নৌকা ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বড় নৌকা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

আমিননগর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ও স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বছরে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলের কোষা নৌকার সবচেয়ে বড় হাট বসে। এই সময়ে সচরাচর বর্ষা দেখা দেয়। রামচন্দ্রপুর নৌকার হাটে এসময় ভিড় লেগেই থাকে। নৌকা তৈরীর কারিগররা দিন রাত ধরে নৌকা তৈরী করছেন। এখন তাদের ব্যস্থ সময়। আয়ের সময়।

রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন সরকার বলেন, রামচন্দ্রপুর বাজারে আশপাশ উপজেলা সবকটি ইউনিয়নের বর্ষা আসলেই নৌকার কিনতে আসে। প্রতি মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০০ থেকে ৩০০ নৌকা বেচাকেনা হয়। এঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের নৌকা পাওয়া যায়।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, তিতাস নদীর পাড়ে রামচন্দ্রপুর বাজারটি আমার ইউনিয়নে পড়েছে। রামচন্দ্রপুর বাজার নৌকা হাটটি কুমিল্লা জেলা ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। মানুষের যাতায়ত ব্যবস্থা জল ও স্থল পথে রয়েছে। ঐতিহাসিক রামচন্দ্রপুর বাজার সাপ্তাহিক হাটের সুনাম রয়েছে নারায়নগঞ্জ, নরসংদী, বাবুর হাট, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা জুড়ে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাটে নৌকা কিনতে আসে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ। রামচন্দ্রপুর বাজারে নৌকার ঘাটেই এখন ক্রেতার ভিড় থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন