মোঃ নুর নবী জনিঃ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেড়শতাধিক বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা। তবে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান,গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে বিকেল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে বিএনপির ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।এসময় নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়সহ কয়েকটি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনির টিপুরদী এলাকার একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে তার প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানা যায় । এ ছাড়া ইলিয়াসদী এলাকায় আনোয়ার আলী মেম্বার, কাজিমউদ্দিন, মাসুদুর রহমান ও মোশারফের ৫টি ঘর
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্লার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
মুন্সিরাইল বাজারে জাপা নেতা মুজিবুর রহমানের দোকানপাট ভাঙচুর ও পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপের চর এলাকায় মিন্টু মিয়া ও সাবেক মেম্বার মমতাজ এর বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।এমনকি পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাবুল ও তার ভাই আমিনুল ইসলামের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয় । নুনেরটেক এলাকায় ইউপি সদস্য ওসমান গণিসহ নেতাকর্মীদের ১৬ বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
সাদিপুর ইউনিয়নের নয়াপুর গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মাসুমের বাড়ি, পঞ্চমীঘাট বাজারে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইয়ুব আলী ও তার ভাই মামুন ভূঁইয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে পিকআপভ্যানে করে মালপত্র লুট করা হয়।
সাদিপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার রফিকুল ইসলামের দুটি বাড়ি ও সাদিপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকায় পল্লী চিকিৎসক বসুর দোকান ভাঙচুর, কলতাপাড়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর গরু লুট করে নিয়ে জবাই করে মধ্যভোজ করা হয়।
৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের বাড়ী ঘর ভাঙচুর করে আসবাবপত্র লুট করা হয়। মহজমপুরে দুলাল ভূঁইয়ার অফিস ও বাড়ি, জামপুরের সাবেক ইউপি সদস্য সুজনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। একই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা হরমুজ আলীর দুই ছেলে রনি ও মোহাম্মদ আলীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পাকুণ্ডা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাদত আলীর বাড়িসহ ১৭টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। তালতলা বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ হোসেনের দোকান, যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের বাড়ি ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং মিরেরটেক বাজারে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক পনির হোসেনের অফিস ভাঙচুর করা হয়।
সনমান্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সাবুর বাড়িঘরে হামলা করা হয়, সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুট করা হয়। অপর দিকে রেহাই পাইনি এসএ টিভির সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিব এর ভাই মোফাজ্জল তাকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে আহত করে বাড়িতে হামলা চালায়।
নোয়াগাঁও ইউনিয়নে গোবিন্দপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের সমর্থক ইমনের বাড়ি ও চৌরাপাড়া গ্রামের আতাউরের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী এলাকায় কৃষক লীগের আহ্বায়ক করিম আহমেদের খামারবাড়িতে হামলা করে ১২টি গরু, হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও মাছ লুট করে নিয়ে যায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা।
ওই বাড়ি দখল করে নতুন ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া পৌরসভার দরপত্র এলাকায় তার আরও একটি খামারের প্রায় ১৭টি গরু লুট করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজিব বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আমরা হিন্দুদের মন্দির, থানা ও সরকারি স্থাপনা পাহারা দিচ্ছি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, কারও ওপর জুলুম, হামলা ও অত্যাচার না করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। অতিউৎসাহী কিছু লোকজন এভাবে হামলা করছে, এটা কাম্য নয়।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে হামলা, মামলায় হয়রানির শিকার ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এসব ঘটিয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়েছে। নতুন করে কেউ হামলা-ভাঙচুরে জড়িত হলে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সবসময় সহাবস্থানের রাজনীতি করেছি। দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করিনি। আশা করি বিএনপিও সহাবস্থানের রাজনীতি করবেন। যারা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।