Daily News BD Online

সাপাহারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

 


সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি :

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার মুংরইল ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও: আব্দুর রশীদ ও খন্ডকালীক উপধ্যক্ষ সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধান ও বিভিন্ন নথিপত্র এবং একটি লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও: আব্দুর রশীদ ও খন্ডকালীক উপধ্যক্ষ সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদের সরকারি নীতি নৈতিকতা বহির্ভূতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের আদেশ অমান্য করে উচ্চতর স্কেল, টাইমস্কেল প্রদান না করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর স্কেল, টাইমস্কেল প্রদানের কথা বলে বাধ্যতামূলক অবৈধ ভাবে অর্থ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ সহ ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে। সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক/কর্মচারীদের পক্ষে আরবী শিক্ষক মোঃ রশিদুল হাসান। অভিযোগের সঙ্গে দাখিল করা হয় অভিযোগের সত্যতা প্রমানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথিপত্র।

আরবী প্রভাষকের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুংরইল এমপিও  ফাযিল মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে যোগদান করে অদ্যবদি সুনামের সাথে চাকুরি করে আসছেন।

পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র মোতাবেক ৫০% প্রভাষক সহকারী অধ্যপক হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার নির্দেশ থাকা সত্তেও উক্ত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) মাওঃ আব্দুর রশীদ ও খন্ডকালীন  উপধ্যক্ষ সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ দিন যাবৎ গড়িমসি করে মোঃ রশিদুল হাছান সহ  অন্যান্য শিক্ষক/কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্য হতে বঞ্চিত রেখেছেন। অপর দিকে তিনি অদৃশ্য ইশারায় অর্থের বিনিময়ে বৈষম্য নীতি অবলম্বন করে অত্র মাদ্রাসার ৩ জন মাধ্যমিক শাখার শিক্ষককে ঠিকই টাইম স্কেল প্রদান করেছেন।

এছাড়া তৎকালীন সময়ের মাদ্রাসা কমিটি মন্ত্রানালয়ের পরিপত্র মোতাবেক শিক্ষক কর্মচারীদের উচ্চতর স্কেল/টাইমস্কেল প্রদানের ৪ বার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও:আব্দুর রশীদ, খন্ডকালীন  উপধ্যক্ষ সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, (ইসলামের ইতিহাস প্রভাষক) নাসির উদ্দীন, (সহকারী শিক্ষক বিজ্ঞান) মোঃ মাহাফুজুর রহমান, (সহকারী শিক্ষক সমাজ বিজ্ঞান) মোঃ শাহাজাহান আলী ও অফিস সহকারী মোঃ মিজানুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে বন্ধ রেখেছেন।

উল্লেখিত শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অত্র প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন ভাতা চালু করার অজুহাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। যে কয়জন শিক্ষক অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তাদেরকে তিনি এযাবৎ কালতক উচ্চতর স্কেল হতে বঞ্চিত রেখেছেন।

আরবী প্রভাষক মাও: রশিদুল হাছান এর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়টির সঠিক তদন্তের জন্য আদেশ প্রদান করলে সাপাহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: শামসুল কবির ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সকল শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে এক বৈঠকে বসে বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রত্যেকের স্বাক্ষগ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা হলে তিনি মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেছেন এবং নথিপত্রগুলি দেখেছেন সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে সিন্ধান্ত নিলে পরে তদন্তের রিপোর্ট জানানো হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাও: আব্দুর রশীদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন যে, গত এক বছর যাবত তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ওই মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন। অথচ কাগজ পত্রে দেখা যায় তিনি ২০২১ সাল হতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। মাঝে সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ ২০২৪ সালে কয়েক মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার পরে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ আব্দুর রশীদ পূণঃ দায়িত্ব গ্রহন করেন। অতিতে তিনি বলেন কোন অধ্যক্ষের সাথে অভিযোগকারীর কি কথা হয়েছে তা তিনি জানেন না। এছাড়া  আরবী প্রভাষক মাও: রশিদুল হাছান এ বিষয়ে তার সাথে কোন পরামর্শ বা তার নিকট কোন সহযোগীতা চাইনি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওঃ আব্দুর রশীদ জানান তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া তিনি ব্যবস্থাও নিতে পারেননা। অথচ কাগজ পত্রে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত দুজন অধ্যক্ষের নিকট এবং সভাপতির  নিকট মোঃ রশিদুল হাছানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন কমিটি চার চার বার সকল সকল শিক্ষকের টাইমস্কেল/ উচ্চতর স্কেল প্রদানের সিদ্ধন্ত প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন অযথা বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধনের লক্ষে অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করছেন। অধ্যক্ষ পদটি পুরণ হলে অধ্যক্ষই বিষয়টির সমস্যা সমাধান করবেন বলেও তিনি জানান।

বিভিন্ন নথিপত্র ও অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, NTRCA শিক্ষকদের নিয়োগ ও বিল করার অজুহাতে বিভিন্ন জনের নিকট হতে অর্থ গ্রহন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নামে টাইম স্কেল/উচ্চতর স্কেল ও গ্রেড পরিবর্তনের সময় শিক্ষকদের নিকট হতে বাধ্যতামূলক অর্থ গ্রহণ করেন। ইংরেজি প্রভাষক সৈয়দ মুজতবা আলী দীর্ঘ ১৩ বছর কাল ৯ কোডে চাকুরী করিতেছেন।

মোঃ রশিদুল হাছানের বকেয়া বেতন প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ের ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর পর পর কয়েকটি চিঠি থাকা সত্ত্বেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদ্বয় নীতি নৈতিকতা বিরোধী এসব কাজে ইতিহাস প্রভাষক নাসির উদ্দীন, সহকারী শিক্ষক বিজ্ঞান, মাহফুজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক সমাজ বিজ্ঞান, মোঃ শাহাজাহান আলী, ও অফিস সহকারি, মো: মিজানুর রহমানের সহযোগিতায় বকেয়া বেতনের প্রদানের কোন পদক্ষেক গ্রহন করিতেছেন না।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুর রশীদ, ১৯৯৩ সালে ১ জানুযায়ী অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। অথচ তিনি ১৯৯৬ইং সালে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে (আঃ লতিক থেকে) নিয়মিত ছাত্র হিসেবে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ ১৯৮৪ সালের ০১ জানুযায়ী হতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অত্র প্রতিষ্ঠানে এবতেদায়ী প্রধান হিসাবে চাকুরীরত থেকে বেতন ভাতা গ্রহন করেছেন। যার শিক্ষক হাজিরা, বেতন বহিতে স্বাক্ষর ও এমপিও  কপিতে নাম বিদ্যমান। আবার একই সময় তিনি-১৯৯০ সালে সেশন জোটের কারনে ১৯৯১ সালে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে অবস্থান করে, আশ্চার্যের বিষয় অত্র প্রতিষ্ঠানে পূনরায় প্রভাষক হিসাবে তিনি চাকুরীতে বিদ্যামান আছেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুর রশীদ, সরকার আবুল কালাম আজাদের চাকুরী ও চাকুরী কালীন পড়ালেখার মাঝে বৈপরিত্তের অজুহাত তুলে এপি স্কেল হতে বঞ্চি করে সিনিয়রিটি লংঘন পূর্বক এপি হন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে উপাধ্যক্ষ ও পরে অধ্যক্ষ করার লক্ষ্যে উক্ত সংঘবদ্ধ চক্রটি অবৈধ ভাবে-ভুয়া দাতা, ভূয়া ছাত্র অভিভাবক, স্বাক্ষর জ্ঞান সমপন্ন ব্যক্তি কে এইচএসসি পাশ দেখিয়ে পকেট কমিটি তৈরী করে তাদের লুটপাটের বানিজ্য প্রসস্ত করে রেখেছেন।

বর্তমান এড হক কমিটি গঠন করেন একই কায়দায়। শিক্ষক ও কমিটির কারো কোন রূপ পরামর্শ ছাড়ায় বিগত কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে হিসাব নিকাসের কয়েকটি সভা আহ্বান করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উক্ত চক্রের নিকট হতে হিসেব নিতে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দেখাযায় লুটেরা চক্রের সহায়তায় সাড়ে বাইশ লক্ষ টাকার এক চমক প্রদ হিসাব দাড় করান। যার মধ্যে সাত লক্ষ টাকা মাত্র ব্যাংক হিসাব নাম্বারে জমা দেখা যায়। অবশিষ্ট পনেরো লক্ষ টাকা লুটেরা চক্রের পকেট ব্যাংক হতে ব্যায় দেখানো হয়, যাহা সম্পুর্ন বিধান বর্হিভূত বা আত্মসাতের সামিল। উক্ত চক্রের সহযোগীতায় অধ্যক্ষ অন্যান্য সকল শিক্ষক/কর্মচারীদের জিম্মি করে বিভিন্ন অপকৌশলে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা প্রকার মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে অপমান ও অপদস্ত করে চলেছেন। তাদের মতের সহিত একমত না হলে অফিসে ডেকে অকথ্য গালিগালাজ,  ছুটির আবেদন না মঞ্জর এমন কি শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ৫/৭দিন পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। মাদ্রাসার অর্থ ব্যাংকে জমা না করে ঐ ৫/৬ জনের পকেটে রেখে যথেচ্ছা খরচ করে চলেছেন।

কমিটির সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে বা কোন প্রকার মুল্যায়ন না করে খেয়াল খুশি মত খরচ করে চলেছেন। যাহা প্রতিরোধ করতে না পারায় সভাপতি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

সকল শিক্ষক কর্মচারীর উচ্চতর স্কেল দেওয়ার জন্য কমিটির চার-চার রেজুলেশন থাকার পরেও কমিটির অগোচরে টাকার বিনিময় উল্লেখিত ৫/৬ জনের সংঘবদ্ধ চক্র তা উপেক্ষা করে অর্থ আত্মসাতের নেশায় বিভোর হয়ে পড়েছে।

এ সকল অপকর্মের হোতারা মিথ্যা অভিযোগ করে আরবী প্রভাষক মোঃ রশিদুল হাছানের বেতন বন্ধ করে দিয়েছিলো যা পরবর্তীতে মন্ত্রানালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বৈধতা বলে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ষে মাদ্রাসার সাবেক কমিটির (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কয়েকজন সদস্যদের সাথে কথা হলে, তারা বলেন, এটাই হল সত্য কথা ইতি পূর্বের অধ্যক্ষ, ভুয়া কমিটি ও উক্ত চক্র লুটপাট করে খেয়েছে। এখনও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উক্ত চক্রের মাধ্যেমে তাদের লুটেপুটে খাওয়ার নিল নকসা বাস্তবায়নে সর্বাত্নক সক্রিয় ভুমিকায় অব্যাহত রেখেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন