সৌরভ মাহমুদ হারুন :
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল পূর্ব পাড়া রেললাইনের পাশে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মস্তকবিহীন অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করার পর গায়ের পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করলেন নিহতের পরিবার। তবে লাশের পাশে পড়ে থাকা ক্যাপের মালিকের পরিচয় পায়নি থানা পুলিশ। নিহত মস্তকবিহীন ব্যক্তির নাম মো. ফয়েজ আহাম্মদ(৩৮)। তিনি একই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার মুনাফ সর্দারের বাড়ির আব্দুল মুনাফের ছেলে। ১১ জুন বুধবার রাত ৮টায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বুড়িচং থানার এস আই (তদন্ত কর্মকর্তা) রাকিব হাসান।
পুলিশ জানায়, গত সোমবার ৯ জুন দুপুর ১টার দিকে উপজেলার বাকশীমূল-মাশরা রেললাইন এলাকায় একটি মস্তকবিহীন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করার তিন দিন পর ফেসবুকে দেখে বুধবার বিকেলে থানায় আসে নিহতের স্ত্রী রোকসানা জান্নাত ও পরিবার। তারা লাশের দেহের পোশাক দেখেই পরিচয় শনাক্ত করেছেন। নিহত মো. ফয়েজ আহাম্মদ স্ত্রী রোকসানা জান্নাত পূর্ণমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, তার বড় মেয়ে ইমরাতুল জান্নাত মিতু কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু ডিগ্রী সরকারি কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বড় ছেলে রাহাত হোসেন রিফাত, ছোট ছেলে রাফসান হোসেন ছাহাদ। নিহতের স্ত্রী রোকসানা জান্নাত জানায়,তার স্বামী ফয়েজ আহাম্মদ গত ৬ জুন শুক্রবার রাতে রাজাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে ঈদগাহ পাহারা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি এবং ঈদের নামাজও পড়তে আসেনি। পুলিশ মস্তকবিহীন অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের তিনদিন পর থানায় গিয়ে পোশাক দেখে চিনতে পারেন পরিবার। কিন্তু লাশের পাশে পাওয়া ক্যাপটি তার স্বামীর নয়। তার স্বামী ডিউটি করেন রাজাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায় প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বে বাকশীমূল এলাকায় রেললাইনের পাশে। স্ত্রী রোকসানা জান্নাত আরও জানায়,তাদের স্বামীর কোনো শত্রু নেই,সংসারে ঝগড়াও হয়নি, সে ঈদের আগে বুড়িচং বাজারে একটি কাপড় দোকানে কিছুদিন ছিলেন। রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালাতেন। তাদের দাবি তার স্বামী ফয়েজকে কেউ হত্যা করেছে,উদ্ধার হওয়া ক্যাপটি কার? প্রশাসন তদন্ত করলেই আসল রহস্য উদঘাটন হবে।
তবে নাম বলতে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, স্ত্রী রোকসানা জান্নাতের সাথে প্রায় সময় ঝগড়া হতো স্বামী ফয়েজের। এছাড়াও স্বামীর অগোচরে কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ তুলে রেখেছেন রোকসানা। স্থানীয়রা আরও জানায়, স্ত্রীর অন্যজনের সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহে তীর স্ত্রীর দিকে। কারণ স্বামী নিখোঁজের পর স্ত্রী স্বাভাবিক ভাবে ঈদ উদযাপন করেন। কান্নাকাটি বা পুলিশের সহযোগীতাও নিতেও দেখা যায়নি। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।
এদিকে রেললাইনের আশেপাশে স্থানীয়রা জানায়, চলতি বছর এপ্রিলের দিকে একই স্থানে পুরাতন বাংলো ঘরের পাশে ট্রেনে কাঁটা তিন যুবকের লাশ পাওয়া গেছিলো। এই স্থানে বছরে ২-৩টি লাশ পাওয়া যায়।পরিবার ও স্থানীয়র একাধিক ব্যক্তির ধারণা ফয়েজকে পরিকল্পিত হত্যা করেছে। এ বিষয়ে রাজাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সর্দার বলেন, ঈদের আগের দিন রাতে ঈদগাহে ডিউটি করে দুইজন। ওই রাতে ফয়েজ ডিউটি করে নাই। কিন্তু ডিউটি করার জন্য রাত ১২টার দিকে তাকে কল দিছিলো। ফয়েজ এর মৃত্যুর সঠিক কারণ আমরা জানি না। বিষয়টি নিশ্চিত করে বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল হক জানান, রেললাইনের পাশে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার পর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে এবং ময়নাতদন্তের রির্পোটের আসার পর বিস্তারিত জানানো হবে।