টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিয়ের চার মাসের মাথায় চাঞ্চল্যকর নাঈম হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্ত্রী রেশমি আক্তার ও তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
রোববার (১ জুন) বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. কাউছার আহমেদ প্রধান আসামি রেশমির জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২১ মে দ্বিতীয় আসামি মাসুদ জামিনে মুক্ত হন।
এদিকে বিচার শুরু হওয়ার আগেই এই দুই আসামির একসঙ্গে জামিনে মুক্তি পাওয়া নিয়ে এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ।
নিহতের পরিবারের আশঙ্কা, জামিনে থাকা আসামিরা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে কিংবা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাতে পারে। একই সঙ্গে তারা পালিয়ে যাওয়ারও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (২ জুন) সকালে দুই আসামির জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর খান দিপু।
তিনি বলেন, 'মামলার এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। এ অবস্থায় জামিনে মুক্তি বিচার বিলম্বের আশঙ্কা তৈরি করেছে। আমরা জামিনের কড়া প্রতিবাদ করেছি। ৫-৭ বার শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে বাদীপক্ষ যদি শঙ্কা প্রকাশ করে, তাহলে জামিন বাতিল চেয়ে আমরা ফের আবেদন করব।'
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্ত্রী রেশমি আক্তার পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রেমিক মাসুদসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী নাঈম হোসেনকে দুর্গম চরাঞ্চলে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ একটি পরিত্যক্ত নৌকার নিচে বেঁধে গুম করার চেষ্টা চালানো হয়।
এরপর বাড়ি ফিরে রেশমি কান্নাকাটি করে স্বামী নিখোঁজ বলে নাটক সাজান। পরদিন নাঈমের পরিবারের সন্দেহ হলে পুলিশে জানানো হয়। পুলিশ কৌশলে রেশমিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যায় জড়িতদের নামসহ মরদেহের অবস্থান জানান।
রেশমির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ তার প্রেমিক মাসুদকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেফতার করে। পরে দু’জনকে নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চর ডাকাইতাবান্দা এলাকা থেকে নাঈমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত নাঈম হোসেন (১৯) ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম দুদুর ছেলে। সে ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। তার ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারটির প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুদু একজন চা দোকানি। সীমাহীন কষ্টে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি, কিন্তু নাঈমের নির্মম হত্যাকাণ্ড সে স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।
ঘটনার পরদিন, ২৭ ডিসেম্বর, নিহতের বাবা বাদী হয়ে রেশমিকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রেশমি ও মাসুদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। তবে মামলার বাকি দুই আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘ তদন্ত শেষে, ২০২৪ সালের ৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আল মামুন চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।