বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই এই সেবা দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এই সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের হাতে থাকা ডিভাইসকেই একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে আলাদা করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বহন করার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গুগল পে’র কাজ কী?
‘গুগল পে’ হলো গুগলের মোবাইল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যা গুগল নিজেই তৈরি করেছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচে ‘গুগল পে’ থাকলে এর মাধ্যমে সরাসরি দোকানে অথবা অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়।
‘গুগল পে’ একটি ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবেও কাজ করে। এতে কোথায়, কখন এবং কী পেমেন্ট হয়েছে তার সব তথ্য নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করা যায়। এই ওয়ালেটে পেমেন্ট কার্ড, লয়ালটি কার্ড, গিফট কার্ড এবং টিকিটের তথ্য রাখা যায়, যা প্রয়োজনে সহজে ব্যবহার করা সম্ভব।
এছাড়া ‘গুগল পে’র মাধ্যমে ‘নিয়ার-ফিল্ড কমিউনিকেশন’ বা স্বল্প দূরত্বের তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ আদান-প্রদান করা যায়। এটি মূলত সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনাকাটার জন্য ব্যবহৃত হয়।
গুগল পে -এর সুবিধাগুলো
১. ঝামেলাহীন লেনদেন: টাকা পাঠাতে বা পেতে অর্থাৎ লেনদেন করতে ব্যাংকে যাওয়ার দরকার হয় না। এছাড়াও খুচরা টাকা গুনেও সময় নষ্ট হয় না।
২. দ্রুত ট্রান্সফার: রিয়েল-টাইমে অর্থাৎ সাথে সাথেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই টাকা লেনদেন হয়।
৩. ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট: খুব দ্রুত ও স্মার্টভাবে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট, মোবাইল রিচার্জ করা যায় গুগল পে-এর মাধ্যমে।
৪. ব্যবসার জন্য সুবিধা: ছোট বা বড় দোকানদাররা খুব সহজেই কিউআর কোড সেটআপ করে ডিজিটাল পেমেন্ট নিতে পারবেন। এতে সময়ও বাঁচবে। হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভবনাও কম থাকবে।
৫. টাকা হারানোর ভয় নেই: অনেকেই পকেটে করে টাকা বহন করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের স্বীকার হন বা হারিয়ে ফেলে। গুগল পে থাকলে এই টাকা হারানোর ভয় বা ছিনতাইয়ের ভয় আর থাকবে না।
৬. ইনসেন্টিভ ও রিওয়ার্ড: অনেক সময় গুগল পে ব্যবহার করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় রিওয়ার্ড পয়েন্টও, যা দিয়ে পরবর্তীতে বিশেষ সুবিধা নিতে পারবেন।
গুগল পে'র সুরক্ষা ব্যবস্থা
গুগল পে-এর অন্যতম বড় শক্তি এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যবহারকারীর তথ্য, কার্ডের ডেটা কিংবা ব্যালেন্স সবই থাকে এনক্রিপ্টেড ও ক্লাউড সুরক্ষিত। ফোন হারিয়ে গেলেও তথ্য অন্য কেউ পাবে না, কারণ এতে আছে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন (ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আইডি) সিস্টেম, পিন কোডের মাধ্যমে সুরক্ষা, রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশন ও ট্রান্স্যাকশন হিস্টোরির ব্যবস্থা।
সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সুবিধা হলো, গুগল পে-তে গুগলের ফ্রড মনিটরিং সিস্টেম সবসময় সক্রিয় থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়মাবলি মেনে গুগল পে চালু করা হবে, ফলে এটি হবে সরকার অনুমোদিত এবং নিয়মতান্ত্রিক।
গুগল পে একাউন্ট যেভাবে ওপেন করতে হবে
গুগল পে ব্যবহার করতে হলে, আপনার স্মার্টফোনে গুগল পে অ্যাপ ইনস্টল থাকতে হবে। এরপর আপনাকে সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে-
১. অ্যাপটি ওপেন করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে।
২. এরপর আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংযুক্ত করতে হবে।
৩. এরপর পিন বা বায়োমেট্রিক সুরক্ষা সেট করুন
৪. সব ধাপ সম্পুর্ণ হলে-এরপর আপনি টাকা পাঠাতে বা নিতে পারবেন কিউআর কোড স্ক্যান করে। এছাড়াও ফোন নম্বর দিয়েও লেনদেন করতে পারবেন।
বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে, এর ব্যবহার আরও সহজ হবে।
অন্যদিকে, অনলাইনে ‘গুগল পে’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ওয়েবসাইট থেকে সহজে কেনাকাটা করা যায়, যা বারবার পেমেন্ট পদ্ধতি নির্বাচন করার ঝামেলা কমায়।
‘গুগল পে’ কিছু অঞ্চলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছে অর্থ পাঠানোর সুবিধাও দেয়।
এটির নিরাপত্তাও বেশ ভালো। ‘গুগল পে’ এর মাধ্যমে করা পেমেন্ট পিন নম্বর, পাসওয়ার্ড এবং বায়োমেট্রিক নিশ্চয়তার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। গুগল পে ওয়েব ব্রাউজার গুগল ক্রোম এবং গুগল প্লে স্টোরের সঙ্গে একীভূত।
বাংলাদেশে যাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে এটি?
১. যারা প্রতিনিয়ত অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত
২. ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, যারা ক্যাশহীন পেমেন্টে আগ্রহী
৩। প্রবাসী রেমিটেন্স গ্রহীতা, কারণ বিদেশ থেকেও টাকা পাঠানো সহজ হবে
৪। ফ্রিল্যান্সার ও গিগ-ওয়ার্কারদের জন্যও এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠবে।
গুগল পে-তে অর্থ যুক্ত করার উপায়
‘গুগল পে’ ব্যবহার করে কেনাকাটা করার জন্য আপনাকে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে হবে। কীভাবে যুক্ত করতে হয়, তা অ্যাপসে গিয়ে নির্দেশিকায় পাওয়া যাবে।