আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনকৃত কয়লার দাম স্থানীয় বাজারমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন খনির শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দাম কমিয়ে খনিটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের ষড়যন্ত্র চলছে, যার পরিণতিতে ঘটতে পারে ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টায় ‘সর্বস্তরের খনি শ্রমিক’ ব্যানারে কয়লা খনির প্রধান ফটকে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়াসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার বহন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন খনির সিবিএ সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বড়পুকুরিয়া আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, চাইনিজ এক্সএমসির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম, এবং লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মেহেরুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, “পিডিবির কাছে প্রতিটন কয়লা ১৭৬ মার্কিন ডলারে বিক্রি হলেও হঠাৎ করে তা কমিয়ে ১০৪ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে খনিটি লাভের বদলে ক্ষতিতে পড়বে।” তারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে যিনি কয়লার ক্রেতা, তিনিই এখন বিক্রেতার দায়িত্বে আছেন, যা প্রশাসনিকভাবে এক ধরনের স্বার্থের সংঘাত তৈরি করছে।
সরকারি নীতিমালার আলোকে উৎপাদনের শুরুর দিকে কয়লার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ ডলার প্রতি টন। পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৭৬ ডলারে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মমতাজ খনি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (অর্থ) অঞ্জনা খান মজলিস পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মূল্য নির্ধারণে সংকট তৈরি হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
তারা আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়া কোল ইনডেক্স (আইসিআই) অনুসারে যদি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১০৪ ডলারে বিদেশি কয়লা এনে চালানো সম্ভব হয়, তাহলে খনি কর্তৃপক্ষও স্থানীয় বাজারে ২০০-২৫০ ডলার দরে কয়লা বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বকেয়া বিলের বিলম্ব মাশুল মওকুফ এবং ৩০০ কোটি টাকা ২৪ কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে ১০৪ ডলার হারেই কয়লার মূল্য পরিশোধ করছে পিডিবি।
বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। খনি বন্ধ হয়ে গেলে আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারাবে এবং এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় (কমপক্ষে তিন মাসের) কয়লার মজুত রেখে বাকিটা বিক্রি করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যা ভালো মনে করবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।”
বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।