নিজস্ব প্রতিবেদক : জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও স্থিতিশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ। সম্প্রতি ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ‘হাইতি ও বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও স্থিতিশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছে স্কুল অফ পাবলিক হেলথের “সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর সায়েন্স অব ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড স্কেল-আপ”। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অভিবাসন কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব ফেলে এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কীভাবে এই চাপ মোকাবেলা করে তা বিশ্লেষণ করা।
এই গবেষণায় হাইতি ও বাংলাদেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় এবং এতে ‘লেভেস্ক মডেল’ ও ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর রেজিলিয়েন্স কাঠামো একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘লেভেস্ক মডেল’ হলো একটি বিশ্লেষণ পদ্ধতি যা স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রভাবকে বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ অংশের গবেষণা সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলোতে পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফলে দেখা গেছে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু দুর্যোগের সময় জনগণ প্রায়ই সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এড়িয়ে চলে। এর পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ- যেমন সেবার মান নিয়ে নেতিবাচক ধারণা, দূরত্ব, খরচ এবং নাগাল পাওয়ার জটিলতা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব দুর্যোগের সময়ে ধারাবাহিকভাবে সেবা প্রদান করতে কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি নতুন ধারণাগত কাঠামো তৈরি ও যাচাই করা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে গতিশীল, আন্তঃসম্পর্কিত পদ্ধতির ওপর জোর দেয়। এই কাঠামো স্বাস্থ্যখাতের কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও নীতি নির্ধারকদের জন্য এটির বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এই কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ডিন ও সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর সায়েন্স অব ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড স্কেল-আপ এর পরিচালক লরা রাইখেনব্যাখ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং মানুষের চলাচল—এই তিনটির সংযোগ বুঝতে হলে আমাদের সিস্টেমভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার টেকসইতা কাঠামো আমাদের এই জটিল সম্পর্ক বুঝতে সহায়তা করে এবং দেখায়, কীভাবে জলবায়ুজনিত ঝুঁকি ও অভিবাসন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও সরবরাহে প্রভাব ফেলে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ বলেন, “জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়তে হলে অবকাঠামোর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, অপরিকল্পিত গর্ভধারণের মতো সামাজিক দুর্বলতাগুলোও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সংকটময় মুহূর্তেও যেন সবাই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে সরকার সবাইকে নিয়ে কাজ করছে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর শেখ শেখ ছাইদুল হক।