চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার পল্লবী থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোহেল ও সহযোগীরা


মিরপুর মিল্লাত ক্যাম্পে ৩ লাখ টাকা দাবিতে ব্যর্থ হয়ে হামলার চেষ্টা, জনতার প্রতিরোধে ভেঙে পড়ে চাঁদাবাজ বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন পল্লবী থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক চাপ্তানি সোহেল ও তার সহোদর আমদানি রনি ওরফে “আমদানি রনি”সহ চাপ্তানি বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। ঘটনাটি ঘটে বুধবার গভীর রাতে প্রথমে মিরপুর-১১ নম্বর বড় মসজিদের ঢালে এবং পরে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সোহেল ও তার বাহিনী তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী রাজেসের ওপর হামলা চালায়। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হামলাকারীদের ধরে গণধোলাই দেন।

ভুক্তভোগী রাজেস সাংবাদিকদের বলেন, “চাপ্তানি সোহেল দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কাজের নাম করে টাকা দাবি করে আসছে। কখনো পুলিশ বক্স নির্মাণ, কখনো পোস্টার-ব্যানার লাগানো, আবার কখনো বিএনপি নেতা আমিনুল হকের নাম ব্যবহার করে। 

টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, এলাকায় ব্যবসা করতে হলে মাসে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। বুধবার রাতে সোহেল আমাকে ফোনে ডেকে নিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে। আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা হামলা চালায়। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সোহেল ও তার বাহিনী গণধোলাইয়ের শিকার হয়।”

ভুক্তভোগীর স্ত্রী দিপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কষ্ট করে খাই, তাদের চাঁদা কেন দেবো? বিএনপির নেতা আমিনুল হক কি এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে সে এলাকায় দখলবাজি আর চাঁদাবাজি শুরু করেছে? ক’দিন আগেও স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করতে আসা এক নারীকে আটক করে নির্যাতন করেছিল। অভিযোগের শেষ নেই তাদের বিরুদ্ধে।”

এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারীর কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০ হাজার, জুম্মনের কাছ থেকে ১৫ হাজার, মাসাআলীর কাছ থেকে ১৫ হাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও নিয়মিত সাপ্তাহিক ও মাসিক মাসোহারা আদায় করে চাপ্তানি সোহেল। রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করেই তিনি এসব অবৈধ চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এলাকাবাসী জানায়, চাপ্তানি বাহিনীর মূল শক্তি হলো যুবলীগ নেতা কালাপাপ্পু ও আওয়ামী দোসর ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেনের আশীর্বাদে সোহেল ও সহোদর আমদানি রনি বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করে চলেছেন। 

আমদানি রনি আওয়ামী লীগ আমলে তিনি ছিলেন এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার পালিত সন্ত্রাসী ‘সুটার’। গত ৫ আগস্টের পর তিনি ভাইয়ের ছাত্রদলের রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে মারধর, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি, নারীদের হয়রানি, জোরপূর্বক টাকা আদায় ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। 

গত দুইমাস পূর্বে তারা এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বিহারী নেতা মুস্তাকের অফিসে আটকে রেখে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল বলেও অভিযোগ আছে। রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। 

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, “পল্লবীতে কি ছাত্রদলের এতই সংকট যে জন্ম থেকেই মাদক সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেড়ে ওঠা একজনকে থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বানাতে হলো? ছাত্ররাজনীতি কি এখন চাঁদাবাজ আর মাদক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?”

জানা গেছে, গণধোলাইয়ের পর সোহেল ও তার সহযোগীরা প্রথমে ইসলামি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং পরে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। 

একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাপ্তানি বাহিনীর সদস্যরা উল্টো প্রচারণা চালিয়ে দাবি করে, তারা নাকি মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন।

 তবে এলাকাবাসী এ দাবিকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের ভাষায়, “মাদক নিয়ন্ত্রণ করবে প্রশাসন, সোহেল বাহিনী নয়। গভীর রাতে সে কেন নবদম্পতিকে ডেকে নিল?”

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ এলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের আশঙ্কা, চাপ্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বাহিনী পল্লবীতে ভয়ংকর তাণ্ডব চালাবে। 

এ ছাড়া বাহিনীর ভয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয়দের দাবি, চাপ্তানি বাহিনীকে সেল্টার দেয় যুবলীগ নেতা, ছাত্র জনতার হত্যার ঘটনায় জড়িত মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দাতা মিল্লাত ক্যাম্পের কালাপ্পু ও আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন