এসএম মিরাজ হোসাইন টিপুঃ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট এন্ড বিল্ডিং প্রোডাক্টসের একটি রেডি মিক্সের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদক (২৪) কে অমানুষিক ভাবে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করার দুদিন পর মামলা দায়ের করেছেন প্রতিবন্ধী যুবকের মা সাজেদা আক্তার।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দশ ঘটিকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরোও ৮/১০ জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
উক্ত মামলার বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম।
হত্যা মামলায় জড়িত আসামীরা হলেন ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট এন্ড বিল্ডিং প্রোডাক্টস লিঃ এর রেডি মিক্সের গাড়ীর চালক, ১/ মশিউর রহমান (২৫), ২/ চালকের সহকারী রিয়াদ (১৯), ৩/ সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম হীরা (৩১), ৪/ চালক নাছির মোল্ল্যা (৪৪), ৫/ ল্যাব টেকনিশিয়ান বাবু রাজবংশী (২৮), ৬/ রেডি মিক্স গাড়ীর মেকানিক্স সাব্বির মোল্ল্যা (২৯), ৭/ সিকিউরিটি গার্ড রেজাউল করিম (৪৬), ৮/ এনামুল হক (২৪), ৯/ হামিদুল ইসলাম (৫২), ১০/ নূরুল ইসলাম (৫৩), ১১/ এডমিন অফিসার আল মুরাদ (৩৭), সহ অজ্ঞাতনামা আরোও ৮/১০ জন।
গত শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সুমিলপাড়া (আইলপাড়া) এলাকায় মানুসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদ ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট এন্ড বিল্ডিং প্রোডাক্টস কোম্পানির একটি গাড়িতে ঢিল ছুড়লে গাড়ির একটি গ্লাস ভেঙ্গে গেলে, গাড়ির চালক ও হেলপার ঐ মানুষিক প্রতিবন্ধী যুবককে আটক করে তাকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট এন্ড বিল্ডিং প্রোডাক্টস লিঃ কোম্পানির ভেতরে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে সারারাত অমানুষিক ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে এবং লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ঐ যুবককে হত্যা করা হয়।
হত্যার পরে উক্ত কোম্পানীতে কর্মরত এলাকার স্থানীয় এক কর্মচারীর চোখে পরে এবং তাৎক্ষণিক ঘটনার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পরলে, স্থানীয়রা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবগত করেন।
সাথে সাথেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর আলম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে আটক করেন।
পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা তদন্তের স্বার্থে এবং নিহতের মা সাজেদা আক্তারের শোকাহত অবস্থা কাটিয়ে উঠলে দুইদিন পর সোমবার রাত দশ ঘটিকার সময় সাজেদা আক্তার উক্ত হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
সাজেদা আক্তার তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে মানুসিকভাবে অসুস্থ ছিলো, সে কখনো কারো ক্ষতি করেনি। সামান্য কারণে তাকে এমন নির্মমভাবে অমানুষিক নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
এলাকার স্থানীয়রা জানান, সাজ্জাদ প্রায়ই এলাকায় ঘোরাফেরা করতো কখনো কারো সঙ্গে বড় ধরনের ঝামেলায় জড়ায়নি।
তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সামান্য একটি গাড়ির গ্লাস ভাঙ্গার কারণে একজন প্রতিবন্ধী যুবককে এতটা নৃশংস ভাবে হত্যা করে তারা মানবিকতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সঠিক বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে সোমবার রাতে থানায় মামলা করেছেন।
এই হত্যাকাণ্ডে মামলায় জড়িত আসামীদের ১১ জনকেই গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।