দেওয়ানগঞ্জে বর্ষালী হাইব্রিড ধানের বীজে চাষির সর্বনাশ



ফারুক মিয়া, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) :

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে হাইব্রিড বর্ষালী জাতের রোপা আমন ধানের বীজে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। এক একর জমিতে এই ধান রোপন করেছিলেন পোড়ার ভিটা গ্রামের কৃষক জুরান আলী। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই মাত্র ২০ দিনের মাথায় ধানের শীষ বের হয়ে যায়। যেখানে স্বাভাবিক নিয়মে শীষ আসতে সময় লাগে ৫০ থেকে ৬০ দিন। ফলে আশানুরূপ ফলনের বদলে পড়েছেন লোকসানের শঙ্কায়।

জুরান আলী বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে বর্ষালী জাতের বীজ কিনেছিলেন তিনি। বীজে সমস্যা ধরা পড়লে ব্যবসায়ীর পরামর্শে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো লাভ হয়নি। এ পর্যন্ত তার প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, যা ফেরত পাওয়ার আশা নেই।

শুধু জুরান আলী নন, উপজেলার পোড়ার ভিটা, তারাটিয়া, মোয়ামারী, বানিয়াপাড়া, কুমড়াকান্দি এলাকার শতাধিক চাষির ক্ষেতেও একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। প্রতিটি গাছে মাত্র দু-একটি শীষ আসছে। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে নতুন আনা এ জাতের বীজ কিনে তারা বড় আশা করেছিলেন। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো।

অন্যদিকে এসিআই কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি দাবি করেছেন, বর্ষালী ধানের বীজ বীজতলায় ২০ দিনের বেশি রাখার নিয়ম নেই। নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ দিন বয়সের চারা ক্ষেত্র রোপন করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যারা ৩০ থেকে ৪০ দিনের চারা রোপন করেছেন তাদের ক্ষেতেই অকালে শীষ বের হয়েছে।

এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত উপজেলা কৃষি বিভাগও। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রতন মিয়া বলেন, “সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেছে, কৃষকেরা বীজতলায় ৩০ থেকে ৪০ দিন রেখে চারা রোপন করেছেন। ফলে ধান অকালে শীষ দিয়েছে। তবুও কৃষকের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা সহযোগিতা করব।”

কৃষক ফয়জুল্লাহ বলেন, “ভালো ফলনের আশায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে ২৫ শতক জমিতে বর্ষালী ধান রোপন করি। কিন্তু অকালে শীষ আসায় এখন লোকসানের আশঙ্কা। বারবার সার আর ওষুধ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।”

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৫ টন বর্ষালী ধানের বীজ বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি বীজ ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্যান্য ধানের বীজ পাওয়া গেছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। কৃষকেরা উচ্চমূল্য দিয়ে বীজ কিনে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চাষিরা বলছেন, বর্ষালী ধান বীজ নিয়ে কোম্পানি প্রচারণা চালিয়েছিল স্বল্পমেয়াদি ও অধিক ফলনের আশ্বাস দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে ফলন কমে গিয়ে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন