নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় এক ভিন্ন আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন এক সাহসী নারী—তিনি হলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুন্নী আক্তার, যিনি জন্মগতভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সমাজের নানা বাঁধা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অবহেলা পেরিয়ে তিনি আজ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ঘোরে তাঁর গল্প। কেউ বলেন,মুন্নী মানেই মানবতার প্রতীক। কেউ আবার বলেন,তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়েও তিনি যেভাবে সবার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা সত্যিই অনুকরণীয়।
মুন্নী আক্তার জানান, তাঁর জীবনের পথচলা সহজ ছিল না। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সমাজের নানা অবজ্ঞা, কটূক্তি আর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কিন্তু আমি কখনো হাল ছাড়িনি। মানুষের পাশে থেকে কাজ করব—এই স্বপ্ন নিয়েই বাঁচি।
মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি নিজেকে এক নতুন পরিচয়ে তুলে ধরেন। জন্মসূত্রে তৃতীয় লিঙ্গের হলেও, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় ইচ্ছাই তাঁকে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রমাণ করেন,মানবতার কোনো লিঙ্গভেদ নেই।
মুন্নী বলেন,নির্বাচনের পর কিছুদিন সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কালবৈশাখীর ঝড়ে আমার অনেক কিছু হারিয়ে যায়। তবুও আমি ভেঙে পড়িনি। আমার পাশে থাকা মানুষগুলোর ভালোবাসাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার স্থানীয়দের কাছে মুন্নী শুধু একজন জনপ্রতিনিধি নন,তিনি মানবতার দূত। অসহায়, নিপীড়িত ও সমাজের প্রান্তিক জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আজ হয়েছেন সবারমুন্নী,আপা।
তাঁর পিতা নূর ইসলাম ও মাতা এখনো জীবিত। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মুন্নী তৃতীয়। শৈশবে পরিবার থেকেও অনেক সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই তাঁর কাজ ও দৃঢ়তা দেখে গর্ববোধ করতে শুরু করেন।
মুন্নীর মতে,তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমরা সমাজের বোঝা নই, আমরা সমাজের অংশ। সুযোগ পেলে আমরাও মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মুন্নী আক্তার একজন দায়িত্বশীল ও সাহসী জননেত্রী। উপজেলা পরিষদের নানামুখী কার্যক্রমে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।দেওয়ানগঞ্জের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন,মুন্নী শুধু একজন ভাইস চেয়ারম্যান নন,তিনি সমাজে পরিবর্তনের প্রতীক। তিনি দেখিয়েছেন, লিঙ্গ নয়, মানুষের পরিচয় তার কাজেই।
মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠা মুন্নী আজও লড়ে যাচ্ছেন নিজের ও সমাজের জন্য।
ঝড়-বৃষ্টি, বাধা-বিপত্তি—সবকিছুকে জয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন, সত্যিকারের জনপ্রিয়তা আসে মানুষের ভালোবাসা থেকে, কোনো লিঙ্গপরিচয় থেকে নয়।