নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরখান এলাকায় যুব মহিলা দলের নেত্রী কাজল রেখা এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন যে, মামলার বাদী বাদল ভূইয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলাটি সাজিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে উত্তরখান থানার পুলারটেক এলাকায় বাদল ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি কাজল রেখা ও কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাদের দাবি, বাদল ভূইয়া নিজেই তার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত টাইলস দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করে সরকারি টঙ্গী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আঘাতের ডাক্তারি সনদ সংগ্রহ করেন।
এই সনদ ব্যবহার করে ২২ অক্টোবর উত্তরখান থানায় বিএনপি ঘরানার কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিমের বক্তব্য অনুযায়ী, এই বিরোধের মূল কারণ হলো বাদল ভূইয়া ও তার ছেলে সিফাত ভূইয়ার দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজি ও হয়রানি।
তিনি জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছে এবং প্রতিবেশীরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানা হয়রানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করে।
সম্প্রতি বাদল ভূইয়া প্রতিবেশীদের চলাচলের পথে দেয়াল তুলে বাধা সৃষ্টি করে এবং নিজের আঙিনার সীমানা বাড়িয়ে নেন।
এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য যুব মহিলা দলের নেত্রী কাজল রেখা স্থানীয়দের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেলে বাদল ভূইয়ার স্ত্রী ও ছেলে লাঠি হাতে তাদের ওপর চড়াও হয়। একাধিক ভিডিও ফুটেজে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় বাদল ভূইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে আক্রমণাত্মক আচরণ করছেন এবং কাজল রেখাসহ উপস্থিত অন্যদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে বাদল ভূইয়া নিজেই ৯৯৯-এ ফোন করে মিথ্যা তথ্যে জরুরি সহায়তা চান।
খবর পেয়ে উত্তরখান থানার একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং বিবাদমান জমির কাগজপত্র ও জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং টেক্স পর্যালোচনা করে চলে যায়।
স্থানীয়রা দৃঢ়ভাবে দাবি করেছেন যে, বাদল ভূইয়া সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে নিজের আঘাতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছেন।
এ বিষয়ে নেত্রী কাজল রেখা বলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাকে এবং তার সহকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছর বাদল ভূইয়া ও তার লোকজন প্রকৃত মালিকদের জমিতে প্রবেশ করতে দেয়নি এবং সরকার পরিবর্তনের পরও স্থানীয় অস্ত্রধারী আ.লীগ নেতাদের দাপটে জমিতে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বাদল ভূইয়ার বিরুদ্ধে পূর্বেও চাঁদাবাজি, দখল ও সামাজিক অশান্তি সৃষ্টির একাধিক অভিযোগ থাকার কথা জানিয়েছেন।
শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১৬ সালে বাদল গংদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং–২২৫) করেছিলেন এবং তাদের অত্যাচারে তিনি ২০২৫ সালে জমি বিক্রি করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।
ভুক্তভোগী সেলিনা আক্তার জানান, বাদল গংদের অত্যাচারে তিনি জমি বিক্রি করে চলে যেতে চাইলেও তারা ক্রেতাদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বাদলকে মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেন।
ঘটনাস্থলের পাশেই সদ্য নির্মিত একাধিক বাড়ির মালিক ভয়ে ভয়ে জানান যে, এই জমিসহ বাড়িগুলোর রেকর্ডীয় মালিক মাইদুল ইসলাম ও মারুফুল ইসলাম। অথচ বছরের পর বছর ধরে বাদলগং মিথ্যা মামলা দিয়ে জায়গাটি দখল করে রেখেছেন। ঢাকা ইলেকট্রিক কোম্পানি (ডেসকো)-এর এক ফিল্ড অফিসার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, বাদল গংদের বাধার কারণে ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় উত্তরখান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এটি চলাচলের রাস্তা ব্যবহারে বাধা সংক্রান্ত ঘটনা। বিষয়টি তদন্তাধীন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, ৯৯৯-এ অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তবে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় ফিরে আসেন। পরে অভিযোগকারী মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে থানায় এসে মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়দের মতে, এই ঘটনা একটি পরিকল্পিত মিথ্যা মামলার উদাহরণ, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। তারা প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং মিথ্যা মামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
