মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী :
"আর্থিক দৈনতা, আর সাংসারিক অভাব অনটন একজন মানুষকে তৈরি করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, লুটেরা, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী অথবা মাদক ব্যবসায়ী। অন্যদিকে একটি মেয়েকে তৈরি করে দেহ ব্যবসায়ী বা পতিতা।" আর একারণেই একজন মানুষ সমাজের চোখে হয়ে ওঠে খারাপ মানুষ হিসেবে। এক অসহায়, দরিদ্র মেয়ের জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি আজকের এই প্রতিবেদন।
আর্থিক দৈনতা আর সমাজের অবহেলা এবং দারিদ্র্যতাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দিল না ২৪ বছর বয়সী এক তরুণীকে। দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লী দৌলতদিয়ার পল্লী হতে উদ্ধার হওয়ার পর তিনি আবারো ফিরে গেলেন আগের সেই অন্ধকার জগতে। ঘটনাটি গত বছরের।
ওই তরুণী রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে।
দীর্ঘ ৬ বছর আগে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে যৌনপল্লীর এই অন্ধগলিতে পা রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি মিডিয়া নিউজের পক্ষ থেকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়েটিকে পল্লীতে জোর করে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছিল। এমন একটি অভিযোগ করে তাকে উদ্ধারের জন্য রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের নিকট আবেদন করেছিলেন ওই ভুক্তভোগী তরুণীর মা।
যার প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বেবী বাড়িয়ালীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। এরপর খবর দেওয়া হয় তার পরিবারের লোকজনকে। থানায় ছুটে আসেন তরুণীর অসহায় বৃদ্ধ বাবা ও ছোট ভাই। থানায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে উদ্ধার হওয়া তরুণী বলেছিলেন, ‘আমাকে কেউ যৌনপল্লীতে জোর করে রাখেনি। আমি সেখানে সব মিলিয়ে ভালোই ছিলাম। আমি আবারো সেখানে ফিরে যাব।’
কেন ফিরে যাবেন জানতে চাইলে ওই তরুণী বলেন, ‘বাড়িতে আমার ৬ বছর বয়সী একটা প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তান রয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই আমার রোজগারের উপর নির্ভরশীল। আমি বাড়িতে ফিরে গেলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।’
তরুণী আরো বলেন, ‘অল্প বয়সে বাবা-মা একটা খারাপ মানুষের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়েছিল। বাবা-মা'য়ে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু আমি যাকে স্বামী বলে মেনে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম সে মানুষটি আমাকে সময়ে অসময়ে খুব বাজে ভাবে ব্যবহার করতো। তার সঙ্গে খুবই মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিলাম।
তার সাথে সংসার জীবনে ভেবেছিলাম একটা বাচ্চা হলে সে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চা হওয়ার পর সে আমার উপর খারাপ ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেই যৌনপল্লীতে গিয়ে নাম লেখাই। গত ৬ বছরে একে একে উম্বার, হালিমুন, সুমি, লালমিয়া ও বেবির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলাম।’
