সুনামগঞ্জে মধ্যনগর শুধু নামেই উপজেলা, এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই!


জাকিয়া সুলতানা, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) :

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার অধিনে ১৯৭৬ সালে টিনসেট চালা ঘরে মধ্যনগর পুলিশ পাড়ি হিসাবে যাএা শুরু করে। এর আগে এটি বংশীকুন্ডা বাজারে ছিল। ১৯৮৩ /৮৪ অর্থ বছরে ধর্মপাশাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয় এবং ধর্মপাশা উপজেলার অধীনে মধ্যনগর পুলিশ পাড়িটিকে থানায়  রুপান্তর  করা হয়। এবং পরবর্তীতে থানার ভবণ নির্মাণ করা হয়। মধ্যনগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮/৯৯ অর্থবছরে মধ্যনগরকে নিকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারি ভাবে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। মধ্যনগরবাসীর ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০ ১/২০০২ অর্থবছরে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যনগর উপজেলাকে বাতিল করা হয়। কিন্তু মধ্যনগরবাসীর প্রাণের দাবি মধ্যনগরকে উপজেলা হিসাবে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জনগণ একত্রিত হয়ে মধ্যনগর উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করে। এই কমিটির নের্তৃতে আবেদন, নিবেদন, মানববন্ধন এবং সভা-সমাবেশ  করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ২০২১ সালের ২৬ শে জুলাই নিকারের ১১৭ তম বৈঠকের সিদ্ধান্তে পুনরায় মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয়। 

২০২২সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে সরকারি ভাবে উপজেলার কার্যক্ষম শুরু করা হয়। মধ্যনগর মা ও শিশু কেন্দ্রের দুতলা ভবনের একটি কক্ষে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় হিসাবে কাজ - কর্ম চলে আসছে। 

৪ বছর অতিবাহিত হয়ে ৫ বছরে পর্দাপণ করা সত্ত্বেও উপজেলার কোনো অবকাঠামো গড়ে উঠেনি।

জানা যায়, ঘোষিত উপজেলার যাবতীয় কজ - কর্ম শুরু করার জন্য প্রশাসনিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় প্রশাসনিক ভবন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ১৬ একর জমির প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করেছেন। আশা করা যায়, যথারীতি প্রশাসনিক ভবন সহ সব কাজই ধারাবাহিক ভাবে শুরু হবে। 

বর্তমানে ২৩টি দপ্তরের ২১২টি পদের মধ্যে ২০৩টি পদই খালি থাকায় কর্মরত আছে মাএ ৯ জন। জনবল কম থাকায় পাশ্ববর্তী উপজেলা ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অধিদপ্তের জনবল দ্বারা বাকী সব কাজ - কর্ম পরিচালিত হয়ে আসছে। 

মধ্যনগর উপজেলা ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন গুলো হল,মধ্যনগর, চামরদানি,বংশীকুন্ডা উত্তর ও বংশীকুন্ডা দক্ষিণ। আয়তনে ২২২বর্গ কিলোমিটারের ৭৯ টি মৌজা ১৪৭ টি গ্রামে দেড় লক্ষ জনতার বসুবাস।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি প্রশাসনিক সবদিকেই বঞ্চিত নামের উপজেলা মধ্যনগর। যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত নাজুক, এই উপজেলাটি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। 

মধ্যনগর উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় বিঘ্ন হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। দেড় লক্ষ মানুষের চিকিৎসার ভরসা ২টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও নেই কোনো এমবিবিএস ডাক্তার। জরুরি চিকিৎসা  নিতে সূদুর ধর্মপাশা উপজেলা সদর হাসপাতালে যেতে হয়।অন্যসব মৌলিক চাহিদার মতোই প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত প্রায় ৬০ টি গ্রাম। এই গ্রাম গুলিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে হাজারো শিশু ঝরে পড়ছে। 

সবদিক মিলিয়ে মধ্যনগর উপজেলাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। মধ্যনগর শুধু নামেই উপজেলা কাজে নেই। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন