"গ্রাহক হওয়ার মানেই যেনো চুরির অপবাদ কাঁধে নিয়ে মিথ্যা মামলার স্বীকার হওয়া, এমনকি সীমাহীন অর্থ দন্ডের বোঝাও নিতে হচ্ছে গ্রাহকদের কাঁধে"
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এর বিদ্যুৎ সেবা প্রদানকারী কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম এখন তাদের ব্যক্তিগত নিয়মে পরিনত হয়েছে। আর এসকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের তৈরি ব্যক্তিগত নিয়মের বলি হয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন (ডিপিডিসি)/বিদ্যুতের গ্রাহক/ সেবা প্রত্যাশীরা।
এমনি এক ঘটনার স্বীকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন, ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার এক গ্রাহক।
দিশেহারা সেই গ্রাহক নিরুপায় হয়ে জানান, আমি এম এস আপন এন্টারপ্রাইজ, প্রোপ্রাইটর, মোঃ আব্দুর রহমান গ্রাহক নাঃ 37592947 মিটার নাঃ DHK 14204 আর এস-7840 সুমিল পাড়া, হোল্ডিং নাঃ B/90.00 সিদ্ধিরগঞ্জ। আমি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার একজন নিয়মিত গ্রাহক, আমি বিগত সময়ে ডিপিডিসি প্রদত্ত গ্রাহক সেবা গ্রহন করে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি, কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হওয়ার কারণে গত চার মাসের বিল বকেয়া হলে, ডিপিডিসি'র ১ আব্দুল গণি রোড, বিদ্যুৎ ভবন ৩য় তলা এর আহ্বায়ক (স্পেশাল টাস্কফোর্স) এর পক্ষে অত্রাদেশে জারীকৃত অভিযান টিমের টিম লিডার বিষ্ণু পদ্ম দত্ত এবং ডিপিডিসি'র সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার এস টি ইঞ্জিনিয়ারঃ রাহুল এবং ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সহ গত ০৯/১১/২০২৫ ইং তারিখে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা কালে, আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন, এবং আমাকে একটি হস্ত নোটিশ প্রদান করেন।
যার স্বারক নং ৮২.৪০২.৪২৯.০০.০০.০৪৯.২০১৪.২২৪.তারিখঃ ০৬/১১/২০২৫ ইং এর উক্ত নোটিশে উল্লেখ্য ছিলো যে, দপ্তরাদেশ মোতাবেক বিদ্যুতের অনিয়ম রোধে গঠিত টিমের কাছে আমার স্থাপনার অনিয়ম ধরা পরে,এবং প্রসঙ্গতিঃ ১/ মিটার বাইপাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কারচুপির অভিযোগ উল্লেখ করে।
নোটিশে আমাকে ১ কার্য দিবসের মধ্যে স্বশরীরে/উপযুক্ত প্রতিনিধি মারফত ডিপিতিসি'র ১ আব্দুল গণি রোড, বিদ্যুৎ ভবন এর ৩ য় তলায় যথা সময়ে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বলা হায়।
অথচ আমার গ্রহিত চলমান মিটারে শুরু থেকে এপর্যন্ত কোনোদিন বাইপাস সংযোগের সাথে কোনো রকম সংযুক্ত ছিলোনা, এমনকি উক্ত টিম আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় এমন কোনো আলামত সংগ্রহ না করে আমাকে কোনো রকম প্রমাণ না দেখিয়ে আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে এবং আমাকে উক্ত নোটিশ প্রদান করে চলে যায়।
আমি শারীরিক অসুস্থতার কারনে গত ১৭/১১/২০২৫ ইং তারিখে ডিপিডিসি'র আব্দুল গণি রোড প্রধান কার্যালয়ে উল্লেখিত দপ্তরে স্বশরীরে হাজির হলে, টিম লিডার বিষ্ণু পদ্ম দত্ত এর নিকট আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, আমি উক্ত কার্যালয়ে কাল বিলম্ব করে যাওয়ার করেন আমার নামে মামলা নথি জাত করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন আমি যথা সময়ে তার সাথে গিয়ে আলোচনা না করার কারনে তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এখন আর তার কিছু করার নাই বলে আমাকে চলে যেতে বলেন, এবং সংশ্লিষ্ট ডিপিডিসি'র সিদ্ধিরগঞ্জ শাখায় যোগাযোগ করতে বলেন।
আমি তার কথা মতো সিদ্ধিরগঞ্জ শাখায় এসে এস টি ইঞ্জিনিয়ার রাহুল সাহেবের নিকট জানতে পারি আমাকে ১৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ১ শত ৫১ টাকা জরিমানা করে একটি নোটিশ প্রদান করে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আমি উক্ত জরিমানা ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমাদের কিছু করার নাই, এটা সম্পূর্ণ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। এছাড়া আমার বিচ্ছিন্নকৃত সংযোগটি পূনরায় চালু করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূনরায় সংযোগ চালু করতে হলে ধার্যকৃত জরিমানার অর্ধেক পরিমান টাকা জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করে, মানি রিসিভ কপি প্রদর্শন সাপেক্ষে সংযোগ পুনরায় চালু করা যাবে।
এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী জানান, আমার সংযোগ মিটারে কোনো ধরনের বাইপাস লাইন ছিলোনা
তাছাড়া আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় বাইপাস লাইনের কোনো রকম আলামত/প্রমান না দেখিয়ে কোনো স্বাক্ষী না ডেকে তারা স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের নামে মনগড়া নিয়ম/আইন তৈরি করে আমাদের মতো সাধারন ও নিরিহ গ্রাহকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জরিমানাও আদায় করছে এবং অন্যায় ভাবে মামলা দিয়েও মানুষিক ও অর্থনৈতিক ভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তাই আমাদের মতো সাধারন ও নিরিহ সেবা প্রত্যাশী গ্রাহকদের এসকল অনৈতিক হয়রানি বন্ধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এবিষয়ে সরাসরি ১ আব্দুল গণি রোড বিদ্যুৎ ভবনে বৃষ্ণু পদ্ম দত্তকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন,আমরা গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে ১ কার্যদিবসের মধ্যে দেখা করতে বলেছি, কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে না আসার কারণে আমরা মামলা দেয়ার জন্য ডিপিডিসি'র সংশ্লিষ্ট সিদ্ধিরগঞ্জ শাখায় নোটিশ প্রদান করেছি। এখন আর আমার কিছু করার নেই।
কোনো প্রমান না দেখিয়ে বাইপাস সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কারচুপির বিষয়টি নোটিশে উল্লেখ্য করা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার কাছে প্রমাণ রয়েছে, প্রমাণের বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে কিছু বলতে চাইনা, এটা আমাদের গোপন বিষয়, এবং এটা আদালত প্রমান করবে।
এখন প্রশ্ন হলো কাউকে কোনো প্রমান না দেখিয়ে অথবা কোনো সাক্ষী না রাখলে, কিভাবে এমন বাইপাস কারচুপির অপবাদ দেয়া যায়। আর একমাত্র বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যাতিত কারো পক্ষেই বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় জানা অসম্ভব বললে কোনো ভুল হবে বলে আমার মনে হয়না।
অন্যদিকে ডিপিডিসি'র সংশ্লিষ্ট সিদ্ধিরগঞ্জ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গ্রাহককে নোটিশের মাধ্যমে ১ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেখা করতে বলা হয়েছে, যেহেতু গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে যেতে পারেনি, এতেই গ্রারহকের কারচুপি প্রমাণিত হয়।
তাই টিম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে আমার কিছু বলার নেই সুতরাং গ্রাহকের কিছু বলার থাকলে সে আদালতে গিয়ে বলবে,এবং আদালত প্রমান করবে সে দোষী নাকি নির্দোষ।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন হলো দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের আমলনামা, অনিয়ম, দূর্নীতির কথা কারোরই অজানা নয়। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগের এমন চলমান অনিয়ম ও দূর্নীতি থাকা সত্বেও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট এসকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম যখন তাদের করা ব্যক্তিগত নিয়ম ও আইনে পরিনত হয়, এবং তাদের কথামতো কাজ নাকরলে অর্থদণ্ড আদায় ও মামলা দিয়ে সাধারণ ও নিরীহ গ্রাহকদের অর্থনৈতিক ও মানুষিক ভাবে হয়রানির স্বীকার করে।
তখন সাধারণ ও নিরীহ গ্রাহকরা এই অনিয়ম, দূর্নীতির বিষয় কার কাছে বলবে, এবং ঐসকল অনিয়ম-দুর্নীতি গ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোথায় গিয়ে মামলা করবে?
তাই সাধারণ গ্রাহক ও ভুক্তভোগীদের আকুল আবেদন ঐসকল অনিয়ম ও ব্যক্তিগত আইন তৈরী কারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে বিদ্যুতের সাধারণ গ্রাহকদের এমন হয়রানি বন্ধে দ্রুত এগিয়ে আসবেন।
