শাহিনুর আলমের বদলির আদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার মানুষ


এসএম মিরাজ হোসাইন টিপুঃ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহিনুর আলম দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠা, সততা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দিন-রাত সমান তৎপরতায় তিনি ও তার টিম সিদ্ধিরগঞ্জের জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিরতিহীনভাবে কাজ করে আসছেন।

গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকায় ডেভিল হ্যান্ট, টহল কার্যক্রম, মাদক, ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং,গুম-খুন সহ সকল প্রকার সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানসহ জননিরাপত্তার জন্য নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন ওসি শাহিনুর আলম ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।

বিগত প্রায় একবছরে বিভিন্ন মহলে পুলিশকে নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতিসহ দেশে ঘটে যাওয়া সকল প্রকার চলমান দেশ বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে কুরুচিপুর্ণ কথাবার্তা ও সমালোচনা হলেও বাস্তবে পুলিশের সকল কার্যক্রম সবসময়ই জনগণের সেবায় পরিচালিত হয়েছে। 

যার বস্তব উদারণ বর্তমানে  সিদ্ধিরগঞ্জের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। 

স্থানীয়দের মতামত নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার থানাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেশর সর্বস্তরে সমালোচনার ঝড় চলমান থাকলেও সিদ্বিরগঞ্জ থানায় ঘটেছে তার উল্টোটা।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পরে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকা সত্বেও আমরা এলাকার আইনশৃঙ্খলা সহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ও শঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু ওসি শাহিনুর আলম সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে আমরা শুধু মাত্র নিশ্চিন্তেই ছিলামনা বরং আমরা সিদ্বিরগঞ্জের প্রতিটি সাধারন মানুষ অসম্ভব সাহসীও ছিলাম।

 আমরা যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে দেখলেই থানায় ফোন করা মাত্রই ওসি সাহেবকে পেতাম। তিনি নিজেই ফোন রিসিভ করে কথা বলতেন এবং সাথে সাথেই তিনি প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেবা প্রত্যাশী দের সহযোগিতা প্রদান করতেন।

তারা আরোও জানান,ওসি শাহিনুর আলম দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে তাদেরকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করার কারনে, সিদ্বিরগঞ্জের মাদক ব্যবসা সহ মাদক বিক্রির একাধিক স্পট বন্ধ হয়েছে, ফলে এই এলাকার মাদকসেবি ও মাদকাসক্ত দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। যার কারনে অত্র এলাকার চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনাও কমে এসেছে। 

অন্যদিকে ডেভিল হ্যান্টের মতো অপারেশন কার্যক্রম চলমান থাকার কারনে, অসংখ্য সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, দখল বাজ এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করায় থানা এলাকায় দেশ বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুম,খুন,ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি দখল বাজির মত ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।  

তাছাড়া আগে জাতীয় নাগরিক সেবা প্রদানকারী হট লাইনের ৯৯৯ নাম্বারে কল করলে থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কালবিলম্ব হওয়ার কারণে প্রায়শই অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ অনেক দূর্ঘটনা ঘটতো প্রতিনিয়তই, কিন্তু বর্তমানে ওসি শাহিনুর আলম থানায় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে, জাতীয় নাগরিক সেবার হট লাইন নাম্বারে কল করা মাত্রই দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার ফলে ঐসকল ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দূর্ঘটনা থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। 

এরই একটি উদাহরণ স্বরূপ  ভুক্তভোগী এক নারী জানান, আমি জাতীয় নাগরিক সেবার জরুরি নাম্বার ৯৯৯–এ ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশের একটি টিম পাঠান। যার ফলে আমি একটি বড়ো ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছি।

পরবর্তীতে যদিও ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার আপত্তি দেখা দেয়, তবুও নিজের দায়িত্বের জায়গায় অটল থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

আর এ কারণেই ওসি শাহিনুর আলমকে রাজনৈতিক ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার মুখে পড়তে হয়, কিন্তু সকল ক্ষোভ, বাধা আর প্রতিহিংসাকে উপেক্ষা করে তিনি তার দায়িত্ব বীরদর্পে পালন করে গেছেন।

ওসি শাহিনুর আলমের বদলির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের রাজনৈতিক ও বিশিষ্টজনদের মতামত নিয়ে জানা যায়, তারা বলেন, শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ না, গোটা নারায়ণগঞ্জের উপরে একটি অদৃশ্য ও অশুভ কালো ছায়া রয়েছে।

এই অশুভ কালো ছায়ার কারনে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সর্বদা অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছি। যখনই সেই কালো ছায়া থেকে কেউ আমাদেরকে একটু আলোর দিকে ধাবিত করতে চেয়েছেন, তখনই সেই সরকারি কর্মকর্তা/ব্যক্তিকে বদলির নাম করে, অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

যেমন, নারায়ণগঞ্জের একজন সৎ যোগ্য এবং মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা, এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিও জাকির হোসেনের মতো সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের সামাজিক ও মানবিক কর্ম লীলাময় আমরা আনন্দিত ও উৎসাহিত ছিলাম, কিন্তু যখন আমরা তাদের কর্মের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছি ঠিক তখনই তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এখন ওসি শাহিনুর আলমের বদলি।

আমরা জানতে পেরেছি দেশব্যাপী লটারির মাধ্যমে প্রতিটি থানার ওসিকেই নাকি বদলি করা হচ্ছে, কিন্তু বদলি শুধু মাত্র কারো অনিয়ম, দূর্নীতি এবং সেচ্ছা চারিতার করনেই হওয়া উচিত। 

এভাবে আর চলতে পারেনা, কারন একটি এলাকার আইনশৃঙ্খলা সহ সার্বিক উন্নয়ন এভাবে কয়েকদিনের জন্য দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে সম্ভব না। তাই আমরা আমাদের বর্তমান ওসি শাহিনুর আলমের বদলির বিরোধিতা করছি, এবং সেই সাথে তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে উক্ত থানায় তার দায়িত্ব বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। 

বদলির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহিনুর আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দেশ ও দেশের জনগণের সেবক তাই তাদের সেবায় আমরা সর্বদা  প্রস্তুত। 

আমাদের কাছে কে নেতা আর কে সাধারণ মানুষ, কে ধনী আর কে গরিব এমনকি পরিচিত/অপরিচিত কারও সাথে কোনো রকম বৈষম্য তৈরি করা  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমাদের এটা করা হলো অনৈতিকতা এবং আমাদের দায়িত্বের প্রতি অবিচার করা শামিল। তাই আমাদের প্রধান কাজই হলো নির্দলীয় ও নিরপেক্ষভাবে দেশ ও দেশের জনগণকে সেবা প্রদান করা। 

অনেক সময় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও কর্তা ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করতে চায়। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আদেশ পালন করেল এবং তাদের স্বার্থ পূরণ হলে বাহবা দেন। আর তা না হলে অযথা কুরুচিপূর্ণ সমালোচনা করেন। কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্বের প্রয়োজনে এবং আমাদের নিয়মিত পেশাদারিত্বের কর্তব্য বজায় রেখে দায়িত্ব পরিচালনা করার চেষ্টা করি।

তাই আমি আমার অবস্থানে থেকে আমার উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ। এখানে আমাকে নিয়ে কেউ আলোচনা/সমালোচনা করলে তাতে আমার দায়িত্ব পলনে আমি কখনোই পিছপা হবোনা।

বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রের কর্মচারী, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমাকে যখন, যেখানে দায়িত্ব পালনের জন্য যেতে হবে আমি যেতে বাধ্য এখনে অসন্তুষ্ট হবার কিছু নেই। কারন প্রতিটা এলাকা এবং প্রতিটা থানাই আমার দেশের ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই এখানে কারো মন খারাপ করার কিছুই নেই। 

রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দেয়া দায়িত্ব পালনে আমাকে যখন যেখানে পাঠানো হবে আমি সর্বদা হাসিমুখে সেখানেই যেতে প্রস্তুত রয়েছি।

এই প্রসঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বিশিষ্টজনদের মতামত হলো,  সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার জনসাধারণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সম্মুখসারিতে থেকে সর্বদা কাজ করে চলেছে। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম এই এলাকার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। 

তাই সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা, এখানে যাকেই দায়িত্ব দেয়া হোক, সে যেনো এই কাজের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট থাকেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন